নাটোরে আমের সাফল্যে লিচুতে ফ্রুট ব্যাগিং

নাটোর, দেশের খবর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নাটোর | 2023-08-31 21:54:05

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর পর তৃতীয় সর্বোচ্চ আম উৎপাদনকারী জেলা হিসেবে পরিচিতি রয়েছে নাটোরের। এক সময় কীটনাশক ছাড়া গ্রীষ্মকালীন ফল উৎপাদনের চিন্তা করতে পারতেন না মৌসুমী চাষিরা। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রথাগত পরিবর্তন এসেছে ফল উৎপাদনে।

উৎপাদিত ফল রফতানির চিন্তা মাথায় রেখে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিষমুক্ত ও নিরাপদ ফল উৎপাদনের লক্ষ্যে চিরাচরিত কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে চাষিরা বেছে নিচ্ছেন ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি। গত কয়েক বছর ধরে এ পদ্ধতিতে শুধুমাত্র আম চাষ করা হলেও এবার যোগ হয়েছে লিচু। কীটনাশকের বিরুদ্ধে মানবদেহ ও পরিবেশের ভারসম্য রক্ষায় ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় জনপ্রিয় হচ্ছে দিন দিন।

নাটোরের লালপুরে চলতি মৌসুমে রফতানির উদ্দেশ্যে ৫০ হাজার আম ও লিচু গাছে (বিশেষ ধরনের কাগজের ব্যাগ দিয়ে মোড়ানো) ফ্রুট ব্যাগিং করা হয়েছে। উপজেলার বিজয়পুর গ্রামের চাষি কামরুজ্জামান লাভলু এ উদ্যোগ নিয়েছেন। গত বছর ১০ বিঘা জমিতে ৩২ হাজার আমে ফ্রুট ব্যাগিং করে সফলতা পেয়ে এ বছর তিনি ১০ বিঘা জমিতে ৩৫ হাজার (আম্রপালি, খিরসাপাতি, লক্ষণা, লেংড়া, ফজলি ও আশ্বিনা) আম ও ১৫ হাজার বোম্বাই ও চায়না থ্রি জাতের লিচুতে ফ্রুট ব্যাগিং করেছেন।

চাষি কামরুজ্জামান লাবলুর দাবি, আম ও লিচুগুলো ব্যাগের ভেতরে থাকায় কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়াই পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবে। এই পদ্ধতিতে আম ও লিচু নষ্টও কম হয় এবং উৎপাদিত আম ও লিচুর ফলনও বৃদ্ধি পায়। স্বল্প খরচে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতির মাধ্যমে মানসম্পন্ন আম ও লিচু উৎপাদন করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার প্রত্যাশা করছেন তিনি।

সম্প্রতি কামরুজ্জামান লাবলুর বাগানে গিয়ে দেখা যায়, বাবুই পাখির বাসার মতো গাছে গাছে সাদা ও হলুদ রঙের কাগজের ব্যাগ ঝুলছে। ভেতরে বাগান মালিক গাছের আম ও লিচু ব্যাগের ভেতরে প্যাকিং করছেন।

কামরুজ্জামন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘গত বছরে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শক্রমে ১০ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের প্রায় ৩২ হাজার আম ফ্রুট ব্যাগিং করে বেশ সফলতা পেয়েছি। সেই অভিজ্ঞতায় এ বছর ৩৫ হাজার আম ও ১৫ হাজার লিচুতে ফ্রুট ব্যাগিং করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘চীন থেকে আমদানিকৃত এই ব্যাগগুলো সাড়ে ৩ টাকা খরচ পড়েছে। ব্যাগগুলো দু’বার ব্যবহার করা যাবে। এ পদ্ধতি ব্যবহার করায় আম ও লিচুর বাগানে বর্তমানে আমাকে কোনো বাড়তি কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়নি। গত বছরের মতো এবছরও ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে উৎপাদিত আম ও লিচুর চাহিদা বেশি থাকায় দেশ ও দেশের বাহিরে রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, জার্মানিসহ মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানির প্রক্রিয়া চলছে।’

লালপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘কামরুজ্জামান লাভলুর হাত ধরেই গত বছর থেকে আম ও চলতি বছর লিচুতে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতির প্রয়োগ শুরু হয়েছে। বিষমুক্ত নিরাপদ ফল উৎপাদনে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতির প্রসার ঘটাতে উপজেলা কৃষি বিভাগ হতে কৃষকদের সব রকম পরামর্শ ও সহায়তার উদ্যেগ নেওয়া হয়েছে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর