কাঠ ব্যবসায়ী থেকে ইয়াবা ডন হয়ে ওঠেন সাইফুল

কক্সবাজার, দেশের খবর

মুহিববুল্লাহ মুহিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কক্সবাজার | 2023-08-30 12:15:02

কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে কাঠ আমদানি করতেন হাজী সাইফুল করিম। ক্রমেই তিনি জড়িয়ে যান ইয়াবা ব্যবসায়। পার্শ্ববর্তী মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান আনতেন তিনি।

দিন যত গেছে ততই আলোচনায় এসেছেন এই ইয়াবা সম্রাট। খুব দ্রুতই মাফিয়া হয়ে ওঠেন সাইফুল। পরিচিতি লাভ করেন সেরা কর দাতা হিসেবেও!

কিন্তু এসবের অবসান ঘটলো শুক্রবার (৩১ মে) ভোররাতে, পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন দেশের এই এক নম্বর ইয়াবা কারবারি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, কাগজে কলমে সাইফুল করিম টেকনাফ স্থলবন্দরের একজন সিএন্ডএফ (আমদানি-রফতানিকারক) ব্যবসায়ী। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে কাঠ আমদানি করতেন তিনি। তবে কাঠ আনার আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে এনেছেন ইয়াবার বড় বড় চালান।

সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে করা ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সর্বশেষ তালিকায় ‘এক নম্বর ইয়াবা ব্যবসায়ী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল টেকনাফের শীলবনিয়া পাড়ার এই হাজী সাইফুল করিমকে। তার বিরুদ্ধে দুই ডজনেরও অধিক মাদক মামলা রয়েছে।

সাইফুল করিমের ভগ্নিপতি সাইফুল ইসলামও এই ইয়াবা সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। এছাড়া তার মামা, মিয়ানমারে মংডুর আলী থাইং কিউ এলাকার মোহাম্মদ ইব্রাহিমও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত।

প্রত্যেক গোয়েন্দা রিপোর্টের শীর্ষে সাইফুল করিম এবং তার পরিবারের সদস্যদের নাম রয়েছে। তার পাঁচ ভাইয়ের বিরুদ্ধেও ইয়াবা ব্যবসায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি দুর্নীতি দম কমিশন (দুদক) তার নামে মামলা করে।

সর্বশেষ টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাসের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে গত ৩ মে সাইফুলের ছোট ভাই মাহবুবুল করিম ও রাশেদুল করিমকে টেকনাফের নিজ বাড়ি থেকে ১০ হাজার ইয়াবা ও চারটি অস্ত্রসহ আটক করে পুলিশ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, টেকনাফ উপজেলার সদর ইউনিয়নের শিলবুনিয়া পাড়া এলাকার ডা. মো. হানিফ প্রকাশ ওরফে হানিফ ডাক্তারের ছেলে সাইফুল করিম। চট্টগ্রাম মহসিন কলেজে পড়াশোনার সময় ১৯৯৭ সালে নগরীর খাতুনগঞ্জ এলাকায় টেকনাফের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের পণ্য কেনা-বেচায় সহায়তা করে খরচ জোগাতেন তিনি। অভাব অনটনে দিন চলতো তার।

ওই সময় তার দাদার বাড়ি মিয়ানমারের মংডু এলাকার ইয়াবা ডন ও মিয়ানমারের মোস্ট ওয়ান্টেড মগা সুইবিন নামক এক আন্তর্জাতিক ইয়াবা কারবারির সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে সাইফুলের। ওই সময় প্রথম দেশে ইয়াবার বড় চালান প্রবেশ করে তার হাত ধরে।

সেই মগা সুইবিনের পৃষ্টপোষকতায় ২০০০ সালের দিকে টেকনাফ স্থলবন্দরে এসকে ইন্টারন্যাশনাল নামে আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ ব্যবসা শুরু করেন তিনি। ২০০১ সালে টেকনাফের বিএনপি নেতা আব্দুল্লাহর বড় বোনকে বিয়ে করে স্থলবন্দরের নিয়ন্ত্রণ নেন।

ওই বছরই মিয়ানমার থেকে পণ্য অমদানির আড়ালে কৌশলে পুরোদমে ইয়াবা আমদানি শুরু করেন সাইফুল। সাইফুলের শ্যালক জিয়াউর রহমান উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন।

মিয়ানমারের ইয়াবা কারখানার মালিকরা লাখ লাখ পিস ইয়াবার চালান পাঠাতো সাইফুলের কাছে। কারণ মিয়ানমারে স্থাপিত ৩৮টি ইয়াবা কারখানায় উৎপাদিত মাল বিক্রির একমাত্র মার্কেট হচ্ছে বাংলাদেশ। এই ইয়াবা ব্যবসার সুবিধার্থে মিয়ানমার-বাংলাদেশ চলাচলের জন্য একাধিক জাহাজও কিনেছে সাইফুল।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে প্রথম দফায় ১০২ জন ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পণ করে। তখন সাইফুল করিমেরও আত্মসমর্পণের কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি ধরা দেননি।

এদিকে, সাইফুলের নিহতের খবরে তোলপাড় চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন ও টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশকে প্রসংশিত করছেন অনেকে।

আরও পড়ুন: টেকনাফে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১ নম্বর ইয়াবা কারবারি সাইফুল নিহত

এ সম্পর্কিত আরও খবর