পরিবহন নিষেধাজ্ঞায় দুশ্চিন্তায় লিচু চাষি-ব্যবসায়ীরা

পাবনা, দেশের খবর

আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, পাবনা | 2023-08-28 03:04:47

পাবনায় আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। বোম্বাই, চায়না-৩, মোজাফ্ফরি ও হাড়িয়া লিচু বাজারে আসতে শুরু করেছে। রমজানের শুরুতেই বাজারে ছিল দেশীয় জাতের লিচু। অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে এবারের লিচুর উৎপাদন।

কিন্তু সহজে পচনশীল ফল লিচু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। একদিকে তারা লিচুর কাঙ্খিত দাম পাচ্ছেন না, আবার অন্যদিকে ঈদের ছুটিতে মহাসড়কে পণ্য পরিবহন বন্ধের ঘোষণা। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ঈদের আগে ও পরের ছয় দিনের এ নিষেধাজ্ঞায় এক ধরনের দুশ্চিন্তা ভর করেছে বাগান মালিক ও দূরদূরান্তের ব্যবসায়ীদের মাঝে।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পাবনা সদর, ঈশ্বরদী, চাটমোহরসহ কয়েকটি উপজেলায় গত কয়েক দশক ধরে বাণিজ্যিকভাবে লিচুর বাগান গড়ে উঠেছে। এ জেলার লিচুর খ্যাতি দেশজুড়েই। গুণগত মান আর স্বাদে বাজারে পাবনার লিচুর আলাদা কদর আছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর পাবনার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আজাহার আলী জানান, মৌসুমি এই ফল চাষে অনেক আগে থেকেই এ জেলার মানুষ ঝুঁকেছে। দীর্ঘদিনের বাণিজ্যিক সফলতায় পুরো জেলাজুড়ে ছোট বড় বাগান তৈরি হয়েছে। উৎপাদন হচ্ছে রসালো নানা জাতের লিচু।

আজাহার আলী বলেন, ‘গত মৌসুমে চার হাজার ৯৯ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হলেও এ বছর যোগ হয়েছে আরও ২০০ হেক্টর। প্রতি হেক্টরে ১২ মেট্রিক টন হিসেবে উৎপাদন ল্যমাত্রা প্রায় পঞ্চাশ হাজার মেট্রিক টন। বাজার দরে যার মূল্য কমপক্ষে ৭০০ কোটি টাকা।’

গত কয়েক বছরে লাভ হওয়ায় পাবনায় লিচু বাগান ও উৎপাদন দুটোই বেড়েছে। আগামীতে জেলায় লিচুর উৎপাদন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে এমন দাবি এই কৃষি কর্মকর্তার।

পাবনার তিনগাছা বাবুর বাগানে কথা হয় সিলেট, চট্টগ্রাম ও রাজধানী ঢাকা থেকে আসা কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে। তারা বলেন, প্রায় ১০ বছর ধরেই পাবনা থেকে লিচু কিনে ব্যবসা করছেন। তারা লিচু পাবনা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলাতে পাঠাচ্ছেন।

চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী বাদল বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই লিচু ব্যবসার সাথে জড়িত। তবে এবার পাবনায় লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে।’

বাগান মালিক ও চাষিরা জানান, খোলা বাজারে যে লিচু প্রতি ১০০ পিস ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেই লিচু বাগান থেকে পাইকাররা নিয়ে আসছেন প্রতি হাজার এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে।

লিচু ব্যবসায়ী ও চাষিরা বলছেন, ঈদের আগে ও পরের ছয় দিন পণ্য পরিবহন বন্ধ এবং ধর্মঘটের ঘোষণায় এক ধরনের দুশ্চিন্তার মধ্যেই রয়েছেন তারা। সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় গাছ থেকে নামানোর অপেক্ষায় থাকা বিপুল পরিমাণ লিচু তাদের খুশির ঈদে বয়ে এনেছে শঙ্কা। ঘরমুখী মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে, পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখলেও, বিকল্প ব্যবস্থায় লিচু পরিবহণের দাবি সংশ্লিষ্টদের।

পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুর এলাকার লিচু ব্যবসায়ী উজ্জ্বল হোসেন বলেন, ‘এবার ব্যাংক ও বিভিন্ন সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে তিনটি বাগানের ৩০০ লিচু গাছ কিনেছি। ফলন ভালো হলেও সেই টাকা এখনও উঠে আসেনি। ফল পাকা ধরেছে। ভাঙাও শুরু করেছি। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে ছয় দিনের পরিবহন ভোগান্তিতে পড়লে আমাকে পুঁজি হারিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পথে বসতে হবে।’

এমনই দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন সদর উপজেলার আবু তালেব, জাহেদ আলী, বাচ্চু মোল্লাসহ এ অঞ্চলের সকল বাগান মালিক, পাইকার ও ব্যবসায়ীরা। পচনশীল পণ্যটি পরিবহনে সরকারের বিশেষ অনুমোদন চান তারা।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক) শাফিউল ইসলাম জানান, জেলা প্রশাসন লিচু ব্যবসায়ী ও এর সাথে সম্পৃক্তদের সমস্যাটি অধিক গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়েছে। বিষয়টি বাণিজ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে অবহিত করা হয়েছে। বিশেষ ব্যবস্থায় লিচু পরিবহনে সিদ্ধান্ত আসবে এমন দাবি জেলা প্রশাসনের এই শীর্ষ কর্মকর্তার।

এ সম্পর্কিত আরও খবর