দেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়েছে। নির্বিঘ্নে ঈদের জামাত শেষ করতে নিরাপত্তা ব্যবস্থাতে এবার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে প্রশাসন।
ঈদের দিন যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এবারই প্রথম চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। মুসল্লিদের নিরাপত্তায় সাদা ও পোশাকে মোট এক হাজার ২০০ পুলিশ, ১০০ র্যাব সদস্য এবং পাঁচ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হবে। ৩২টি নিরাপত্তা চৌকি থাকবে। ২৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে কাজ করবে স্ট্রাইকিং ফোর্স।
চার স্তরের নিরাপত্তা বলয় পার হয়ে মুসল্লিদের প্রবেশ করতে হবে মাঠে। মাঠের চারপাশে বিভিন্ন গেটে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে দেহ তল্লাশি করা হবে। থাকবে অসংখ্য সিসি ক্যামেরা। এছাড়া নামাজের সময় শোলাকিয়া ঈদগাহ ও আশপাশের আকাশে নজরদারি করবে শক্তিশালী ড্রোন ক্যামেরা।
শনিবার (১ জুন) দুপুরে শোলাকিয়া মাঠের প্রস্তুতি পরিদর্শনে গিয়ে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, মুসল্লিরা যেন নিরাপদে ঈদগাহে নামাজ পড়ে নিরাপদে যাতে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন, সেজন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বহিরাগতদের উপর নজরদারি করতে এরই মধ্যে মাঠের আশপাশের বাসাবাড়িতে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। নিরাপত্তার স্বার্থে শোলাকিয়া মাঠে জায়নামাজ ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না মুসল্লিরা।
পুলিশ কর্মকর্তা জানান, এবার শোলাকিয়া ঈদগাহে ১৯২তম ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের বৃহত্তম ঈদের জামাতের নিরাপত্তায় অন্যান্য বাহিনীর মতো সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্তায় থাকবে এলিট ফোর্স র্যাব। নামাজকে নির্বিঘ্ন করতে এবং যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় র্যাবের শতাধিক সদস্য সক্রিয় থাকবে।
এদিকে সকালে শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিদর্শন শেষে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১৪ ময়মনসিংহের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ এফতেখার উদ্দিন জানান, এবারই প্রথম র্যাবের নিরাপত্তা বহরে যুক্ত হচ্ছে অত্যাধুনিক স্নাইপার রাইফেল। মাঠের চারপাশে বসানো হবে সিসি ক্যামেরা। পোশাকি নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি থাকবে মাঠের ভেতরে-বাইরে গোয়েন্দা নজরদারি। যেকোনো ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ দমন করা হবে কঠোর হাতে।
তিনি বলেন, মাঠের চারপাশে ওয়াচ টাওয়ার থাকবে। দূরবর্তী কোনো স্থানে যদি কোনো সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চোখে পড়ে সেক্ষেত্রে ওয়াচ টাওয়ারে অবস্থান নেওয়া স্নাইপাররা স্নাইপিং রাইফেল দিয়ে ব্যাবস্থা নেবে। সবচেয়ে খারাপ ইনসিডেন্ট হতে পারে এমন ধারণা মাথায় নিয়েই প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো হুমকি নেই।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১৪ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের অধিনায়ক লে. এম শোভন খান, এএসপি মো. জসিম উদ্দিনসহ র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের নামাজে শোলাকিয়া ঈদগাহের কাছে পুলিশের একটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা চালায় জঙ্গিরা। এতে দুই পুলিশ সদস্য, এক এলাকাবাসী এবং এক হামলাকারী নিহত হন।