'যেসময় নদীতে মাছ আছিল (ছিল), হেসময় (সে সময়) আঙ্গোরে (আমাদের) মাছ ধইরতে দেয় নাই। আবার নদীতে নাইমলে (নামলে) অফিসাররা আই (এসে) জাল আর নৌকা লই (নিয়ে) যায়। অফিসাররা কয় (বলে) কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরা অবৈধ। হরে (পরে) আবার ধার-দেনা করি নৌকা আর জাল কিনতে অই (হয়)। এখন নিষেধও নাই, আবার নদীতে মাছও নাই। তাই ঈদের দিন হোলা-মাইয়ার (ছেলে মেয়ে) মুখে একটু সেমাই তুলে দেনের (দেওয়ার) লাই (জন্য) সুদের ওপর টিয়া (টাকা) নিতে অইছে (হয়েছে)।'
লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার মতিরহাট এলাকার কয়েকজন জেলের কাছ থেকে ঈদ কাটানোর পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বার্তা২৪.কমকে এসব কথা বলেন তারা।
জেলেদের মধ্যে রয়েছে ইব্রাহিম হোসেন, সিরাজুল ইসলাম, নুরুল হক ও আলাউদ্দিন মাঝি। যদিও তাদের উপার্জন এই মেঘনায়ই, আবার এই মেঘনার কারণেই তারা আজ নিঃস্ব। বাড়ি-ঘর সর্বস্ব হারিয়ে তাদের থাকতে হচ্ছে বেড়িবাঁধ এলাকায়। ধর্মীয় উৎসবগুলোও ঠিকমতো উদযাপন করতে পারে না। ধার-দেনাতেই তাদের ঈদ কাটাতে হয়।
জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরে প্রায় ৬২ হাজার জেলে রয়েছে। এর মধ্যে নিষেধাজ্ঞার সময় প্রায় ২৫ হাজার জেলে সরকারি খাদ্য সহায়তা পায়। অধিকাংশরাই এই সহায়তা থেকে বঞ্চিত। নিষেধাজ্ঞা শেষে গত এক মাস নদীতে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। যার কারণে জেলার অধিকাংশ জেলেই নদীতে যাচ্ছে না। অন্য কোনো কাজ না করায়, এখন তাদের উপার্জনও নেই। কিন্তু ঈদতো কাটাতে হবে। তাই দাদনদারদের থেকে সুদের ওপর টাকা নিতে হয়েছে তাদের।
আলাউদ্দিন নামে এক জেলে বলেন, ‘মার্চ-এপ্রিল দুই মাস নিষেধাজ্ঞা থাকায় নদীতে যাইনি। গত এক মাস ধরে নদীতে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। প্রথম দুই-একদিন গেলেও এরপর আর নদীতে নৌকা ভাসানোর ইচ্ছা জাগছে না। সংসার চলে ধার করে। ঈদের জন্য ছেলেমেয়েকে একটি জামাও কিনে দিতে পারিনি।’
আক্ষেপ করে নুরুল হক মাঝি বলেন, ‘কার্ড আছে, কিন্তু সরকারি সহায়তা আমাদের কপালে জোটে না। অনেকে নাম মাত্র জেলে, অথচ তারাই সরকারি বরাদ্দকৃত চাল পায়। আমরা পেশাদার কার্ডধারীরা চাল পাই না। চালের জন্য বোর্ড অফিসে গেলে বলে আমাদের জন্য বরাদ্দ নাই। এদিকে নদীতেও মাছ নেই, তাই বাড়তি খরচ করে নদীতে যেতে পারছি না।’
জেলে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘দুই মাস নিষেধাজ্ঞার সময় ধার-দেনা করে নৌকা মেরামত করে রেখেছি। প্রথম দুইদিন গিয়ে মাছ পাইনি। এজন্য এখন আর যাচ্ছি না। ধারের টাকাও পরিশোধ করতে পারছি না। উপার্জন যেহেতু নেই, ঈদ আনন্দও আমাদের থাকতে নেই।’