কাজ করতে চান হাত হারানো তানভীর

ফরিদপুর, দেশের খবর

রেজাউল করিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ফরিদপুর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-23 14:51:27

অভাবের সংসারে মা ও বাবার মুখে একটু হাসি ফোটাতে বিদেশ গিয়েছিলেন ফরিদপুর সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের শোলাকুন্ডা গ্রামের তানভীর। কিন্তু কাজ শুরুর ২৫ দিনের মাথায় বাম হাত হারাতে হয় তাকে। বিদেশে দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে প্রায় শূন্য হাতে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। কিন্তু পরিবারের হাল ধরতেতো তাকে কিছু একটা করতে হবে। কাজের প্রতি অদম্য স্পৃহাও আছে তার। কিন্তু মিলছে না তেমন কোনো কাজ।

জানা গেছে, মো. তানভীর ইসলাম (২৪) শোলাকুন্ডা গ্রামের মো. জলিল ব্যাপারীর (৫২) ছেলে। পেশায় তিনি একজন কৃষক, তবে নিজের জমি নেই। অন্যের জমি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। আর মা সালমা বেগম (৪৬) গৃহিণী। দুই ভাইবোনের মধ্যে তানভীর ছোট। বড় বোন জরিনা বেগমের বিয়ে হয়ে গেছে।

আরও জানা গেছে, তানভীর ২০১৬ সালে এসএসসি পাস করে ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। কিন্তু অভাবের সংসারে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল একটি বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে চার লাখ টাকা খরচ করে পাড়ি জমান মালয়েশিয়ায়। সেখানে ন্যাম হাইম সেপটিক গ্লাস নামক এক প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করেন। ওই কোম্পানি থাই গ্লাস প্রস্তুত করে। কাজের ২৫ দিনের মাথায় অসাবধানতাবশত রোলার মেশিনের মধ্যে বাম হাত ঢুকে যায়। পরে জ্ঞান ফিরে দেখেন তিনি হাসপাতালে ভর্তি এবং বাম হাত কনুই থেকে বিচ্ছিন্ন।

এরপর ছয়মাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ও তিন মাস বিশ্রামে ছিলেন তিনি। সংসারের অভাব মেটাতে যে স্বপ্ন বুকে ধারণ ও লালন করে দেশ ছেড়েছিলেন তা আর পূরণ হয়নি। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি শূন্য হাতে দেশে ফেরেন তিনি। নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ক্ষতিপূরণ হিসেবে ব্যাংকের মাধ্যমে তিন লাখ ৩৯ হাজার টাকা এবং বিমানে ওঠার আগে এক হাজার রিঙ্গিত দেয়।

দেশে ফিরে দু’চোখে অন্ধকার দেখা শুরু করেন তানভীর। কারণ বিভিন্ন মানুষের এবং ব্র্যাক ব্যাংক থেকে চার লাখ টাকা ঋণ করে বিদেশ গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু একটি টাকাও পাঠাতে পারেননি। দেশে ফিরে দেখেন সুদে আসলে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ টাকা। ক্ষতিপূরণ বাবদ পাওয়া টাকা থেকে কিছু দেনা শোধ করেন তিনি। এখনও চার লাখ টাকার ঋণ আছে।

তানভীর বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমি কাজ করতে চাই, অভাবের সংসারে বাবা-মায়ের মুখে হাসি দেখতে চাই। গত দুই মাস বিভিন্ন জায়গায় গিয়েও কোনো কাজ মেলেনি। সবাই শুধু আশ্বাস দিচ্ছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি কারও গলগ্রহ হয়ে বেঁচে থাকতে চাই না। আমার বিশ্বাস সমাজের কোনো সচেতন বিবেকবান মানুষ আমার কষ্টের দিনে এগিয়ে আসবেন।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর