ছুটি মানেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। কিন্তু অনেকটায় ব্যতিক্রম এবার। ঈদের লম্বা ছুটির পরও আশানুরূপ পর্যটকের আগমন ঘটেনি পার্বত্য এ জেলায়। আশপাশের ভ্রমণপিপাসু মানুষের পদচারণায় পর্যটন স্পট নীলাচল, মেঘলা, স্বর্ণমন্দির, নীলগিরি মুখরিত থাকলেও শহরের আবাসিক হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট-গেস্টহাউজগুলো অনেকটায় ফাঁকা।
পাহাড়ে আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে অপহরণ-হত্যাসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রভাব পড়েছে পর্যটন শিল্পে- দাবি পর্যটন সংশ্লিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জেলা বান্দরবানে শুক্র-শনিবার আকর্ষণীয় ট্যুরিস্ট স্পট নীলাচল, মেঘলা, স্বর্ণমন্দির, চিম্বুক, নীলগিরি, শৈলপ্রপাত, রিজুকঝর্ণা, কিংবদন্তি বগালেক, ডিম পাহাড় চূড়া সবখানেই পর্যটকদের ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে।
সাঙ্গু নদীতে নৌকা নিয়েও ঘুরে বেড়িয়েছেন পর্যটকেরা। বলা যায় পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত ছিল জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো। কিন্তু সেটি অন্যান্য বছরের তুলনায় সংখ্যায় কম। তবে পর্যটন স্পটগুলো ভিড় থাকলেও আবাসিক হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট-গেস্টহাউজগুলোতে আশানুরূপ পর্যটকের আগমন ঘটেনি দাবি ব্যবসায়ীদের।
বান্দরবানের হোটেল ফোরস্টারের স্বত্বাধিকারী রিপন চৌধুরী ও পালকি গেস্টহাউজের ম্যানেজার মোহাম্মদ শাহীন জানান, মুষ্টিমেয় কয়েকটা রিসোর্ট-হোটেল ছাড়া সবখানেই রুম ফাঁকা এবার। কিন্তু অন্যান্য বার ঈদের অনেক আগেই হোটেলের সবগুলো কক্ষ বুকিং হয়ে যেত। রমজান মাসজুড়ে ফাঁকা ছিল। ঈদের ছুটিতেও পর্যটকের আগমন না ঘটায় ব্যবসায়ীকভাবে লোকসান গুণতে হচ্ছে তাদের। এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অনেকদিন লাগবে।
আবাসিক হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা সারা বছর আশায় থাকেন ঈদে জমে উঠবে ব্যবসা। কিন্তু পাহাড়ে আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে অপহরণ-হত্যাসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের খবর গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে পর্যটন শিল্পে।’
এ বিষয়ে বান্দরবানের পুলিশ সুপার জাকির হোসেন মজুমদার বলেন, ‘বান্দরবানে অপহরণ-হত্যার ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু এগুলো পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু নয়। ঘটনাস্থলগুলোও পর্যটন এলাকা থেকে অনেক দূরে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশসহ প্রশাসন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছে। এখানে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। পর্যটকদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ বান্দরবান।’
পর্যটনের সম্ভাবনাময় এ জেলা শহরের কাছেই মেঘলায় রয়েছে আকর্ষণীয় দুটি ঝুলন্ত সেতু। যা দেশের অন্য কোথাও নেই। রয়েছে মিনি সাফারি পার্ক, শিশুপার্ক, প্রাকৃতিক লেক, চিড়িয়াখানা, চা বাগানসহ পর্যটকের মন ভোলানো সমস্ত আয়োজন।
শহরের অদূরে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট নীলাচলে পাহাড়ের সাথে আকাশ যেন মিতালি গড়েছে। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা নীলাচলে গিয়ে মুগ্ধ হতে বাধ্য। এ জেলায় রয়েছে দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ তাজিংডং বিজয়, ক্যাওক্রাডংসহ অসংখ্য পাহাড়। এ দুটি পর্বত শৃঙ্ঘই রোমা উপজেলায়। আরও রয়েছে বাংলার দার্জিলিং খ্যাত চিম্বুক পাহাড় ও সেনা নিয়ন্ত্রিত স্বপ্নীল নীলগিরি পর্যটন স্পট। যেখানে অনায়াসে মেঘের ছোঁয়া পাওয়া যায়।
এছাড়াও রয়েছে রিজুক ঝর্ণা, নিজস্ব গতিতে সব মৌসুমেই থাকে সচল। বালাঘটায় নির্মিত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান বৌদ্ধ ধাতু স্বর্ণ জাদি পর্যটনের ক্ষেত্রে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। এখানে রয়েছে মারমা, ত্রিপুরা, ম্রো, বম, তঞ্চঙ্গ্যা, খুমি, খেয়াং, পাঙ্খো, চাকমা, চাক ও লুসাইসহ ১৩টি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর একসঙ্গে বসবাস। দেশের অন্য কোথাও এতগুলো জনগোষ্ঠীর বসতি নেই। পাহাড়িদের বৈচিত্র্যময় জীবন চিত্র যে কারো মনকে উৎফুল্ল করে।