ফরিদপুরে ঢাকাগামী বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়

ফরিদপুর, দেশের খবর

রেজাউল করিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফরিদপুর | 2023-09-01 16:04:09

ঈদ উপলক্ষে ফরিদপুরে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরে আসা হাজার হাজার মানুষকে তাদের প্রিয়জনদের ছেড়ে এবার ফিরে যেতে হচ্ছে কর্মস্থল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে। আসার সময় ঢাকা থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার পর এবার ফেরার সময়ও বাসে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। ভাড়া নিয়ে ভোগান্তিতে পড়লেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শুনিয়ে যাচ্ছেন ফাঁকা বুলি। অভিযোগ ওঠার পরও তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি প্রশাসনকে।

ফলে যাত্রীদের ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। ঈদের অজুহাতে যাত্রী প্রতি ভাড়া বাড়ানো হয়েছে ৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। এই বাড়তি টাকা দিয়ে বাধ্য হয়ে যাত্রীদের রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যেতে হচ্ছে।

ফরিদপুর থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরি ঘাট হয়ে ঢাকার দূরত্ব ১১০ কিলোমিটার। এ পথে ফরিদপুর থেকে ফেরি পারাপারে সাধারণ একজন বাসযাত্রীর ভাড়া নেওয়া হয় ২৬৩ টাকা। সে ভাড়া আগে থেকেই বাড়িয়ে নেওয়া হতো ৩০০ টাকা। ঈদ উপলক্ষে আরও ৫০ টাকা ভাড়া বাড়িয়ে বর্তমানে ফরিদপুর থেকে ঢাকা যাওয়ার ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৩৫০ টাকা করে।

এ পথে এসি বাসের যাত্রী প্রতি ভাড়া নেওয়া হয় ৪৫০ টাকা। ভাড়া বাড়িয়ে বর্তমানে নেওয়া হচ্ছে ৭০০ টাকা। আরএম-টু বাসে ভাড়া নেওয়া হয় ৭০০ টাকা। ঈদ উপলক্ষে ওই বাসে ভাড়া বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে ১০০০ টাকা।

ফরিদপুর থেকে ঢাকায় সাধারণত গোল্ডেন লাইন, সাউথ লাইন, সূর্যমুখী, জাকের, সাউদিয়াসহ বিভিন্ন নামের বাস যাতায়াত করে। এর মধ্যে বাসের মান অনুযায়ী গোল্ডেন লাইন ও সাউথ লাইনের প্রতি যাত্রীদের ঝোঁক বেশি। গোল্ডেন লাইন এসি বাসের ভাড়া যাত্রী প্রতি সবচেয়ে বেশি বাড়ানো হয়েছে। এ পরিবহনে ভাড়া আরএম-টুতে ৩০০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে।

ওবায়দুর রহমান নামের এক যাত্রী জানান, ফরিদপুর-ঢাকা পথে অস্বাভাবিক হারে বাসের ভাড়া নেওয়া হয়। ঢাকা থেকে ফরিদপুরের দূরত্ব ১১০ কিলোমিটার। এই পথটুকুর ভাড়া কোনো ভাবেই ৩০০ টাকা হতে পারে না। তার উপর ঈদের অজুহাতে যাত্রীদের জিম্মি করে ভাড়া বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

যাত্রী রুবেল মিয়া জানান, কুষ্টিয়ার ভাড়া ১৫০ টাকার স্থলে নেওয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা। ফরিদপুর থেকে খুলনার ভাড়া ২৫০ টাকা। কিন্তু নেওয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা। এছাড়া ব্যাগ প্রতি ১০০ টাকা করে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।

ভাড়া বাড়ানোর কথা স্বীকার করে গোল্ডেন লাইন পরিবহনের ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম বাচ্চু জানান, ঈদের সময় ঢাকা-ফরিদপুর পথে একটি রুটে যাত্রী পাওয়া যায় না। ঈদের আগে ঢাকা থেকে চাপ থাকলেও ফরিদপুর থেকে বাসের যাত্রী পাওয়া যায় না। অপরদিকে ঈদের পর ফরিদপুর থেকে যাত্রী পাওয়া গেলেও গাবতলী থেকে যাত্রী পাওয়া যায় না। এজন্য ভাড়া বাড়িয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হয়।

ফরিদপুর বিআরটিএর উপ-পরিচালক আতিকুল রহমান জানান, ঢাকা থেকে ফরিদপুর রুটে নন এসি বাসের ভাড়া সরকার থেকে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে ২৬৩ টাকা। তিনি জানান, এসি বাসের ক্ষেত্রে সারা দেশে সরকারিভাবে ভাড়া ঠিক করে দেওয়া হয়নি। এদের বিরুদ্ধে দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক সোহেল শেখ জানান, যাত্রীরা তাদের টিকিট নিয়ে এক মাসের মধ্যে লিখিত অভিযোগ করতে পারবে। আর প্রমাণিত হলেই জরিমানা আদায় করে যাত্রীকে তার টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করা হবে।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সালাহউদ্দিন জানান, ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে এ অভিযোগ পাওয়ার পর গত ৩১ মে বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে সকল বাসের কর্মকর্তাদের মৌখিকভাবে সতর্ক করে দিয়ে আসা হয়েছে। তারপরও ভাড়া বেশি নেওয়া হলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। যাতে করে সাধারণ যাত্রীদের কোনো ভোগান্তিতে পড়তে না হয়। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন কাজ করবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর