পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে রাজধানী থেকে সড়ক, রেল ও নৌপথে রীতিমতো যুদ্ধ করে পাবনায় এসেছিলেন মানুষজন। ঈদের ছুটি শেষ হতে ফেরার বেলায় নতুন করে ভোগান্তিতে পড়েছেন ঢাকাগামী যাত্রীরা।
পাবনার বাস মালিকরা ঈদের কয়েকদিন আগে থেকে ঢাকাগামী টিকিটের মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছেন কয়েক গুণ। বাধ্য হয়ে চড়া মূল্যেই টিকিট কেটেছেন অনেক যাত্রী। আবার কেউবা রয়েছেন টিকিটের মূল্য কমার অপেক্ষায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাবনা থেকে ঢাকাগামী ননএসি বাসের টিকিট ৩০০ টাকার জায়গায় আরও ৫০০ টাকা বাড়িয়ে ৮০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। অন্যদিকে এসি টিকিট হয়েছে সোনার হরিণ! ৫০০ টাকার টিকিট ৭/৮ শ’ টাকা বাড়িয়ে ১২/১৩শ’ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
রোববার (০৯ জুন) বিকেলে পাবনা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায় ঢাকাগামী কোচের সংখ্যা কিছুটা কম। সেখানে কোনো টিকিট বিক্রি করতে দেখা যায়নি। শহরের পুরাতন বাস টার্মিনালে কোচগুলোর টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট দেওয়া হচ্ছে।
সন্ধ্যায় পুরাতন টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, রোববার থেকে অফিস-আদালত খোলা হলেও অনেক মানুষ তখনও ঢাকায় যেতে পারেননি। টিকিট কিনতে এসে চড়া মূল্য দেখে অনেকেই টিকিট না কেটে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।
পুরাতন বাস টার্মিনালে পাবনা এক্সপ্রেস, শাহজাদপুর ট্রাভেলর্স, আলহামরা এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সি-লাইন ও সরকার পরিবহনসহ বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টারে সাধারণ যাত্রীদের জটলা দেখা যায়। কেউ টিকিট পাচ্ছেন আবার কেউ পাচ্ছেন না।
জানা যায়, ঈদের আগেই অনেকে ফিরতি টিকিট সংগ্রহ করেছেন অতিরিক্ত দামে। ঈদের পর টিকিট তাই দুর্লভ হয়ে উঠেছে। আর সেই সুযোগে অনেক বেশি চড়া দামে টিকিট বিক্রি করছে কাউন্টারগুলো।
টিকিট কাউন্টারে কর্মরতদের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলাপ করতে চাইলে তারা টিকিটের মূল্য বৃদ্ধির কথা স্বীকার করে বলেন, বেশি কিছু বলার সময় নেই। কারণ জানতে চাইলে মালিককে ফোন দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাগামী একটি নৈশ কোচের মালিক বলেন, ভাড়া না বাড়িয়ে আমরা নিরূপায়। পাবনা থেকে যে গাড়ি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে ফিরতি সময়ে ওই গাড়ি যাত্রী ছাড়াই চলে আসবে। ফলে আমাদের ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায়। বারবার এভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার কারণে বাড়তি ভাড়ায় টিকিট বিক্রি করতে হচ্ছে।
পাবনা এক্সপ্রেসে টিকিট নিতে আসা মাসুম বলেন, ৩শ’ টাকার টিকিট ৮শ’ টাকায় কিনেছি। ঢাকা যে যেতেই হবে।
শাহজাদপুর ট্রাভেলসে টিকিট নিতে আসা রেজাউল করিম বলেন, ঈদের আগেই ১২শ’ টাকা করে ৪টি টিকিট কিনেছি। এখন জানলাম, ১৩শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব অনাচার দেখার কেউ নেই।
পাবনা এক্সপ্রেস, শ্যামলী ও সরকার ট্রাভেলস কাউন্টারে আসা জীবন, রফিক, শামীম, রানা, বাপ্পি, উজ্জলসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তাদের অভিযোগ, টিকিট মাস্টার আগে থেকেই সিট প্ল্যান বুক করে রেখেছেন, ইচ্ছেমত ভাড়া আদায় করছেন। কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। কেউ কিছু বললেই টিকিট নেই বলে সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন।
সাধারণ যাত্রীরা বলছেন, জেলা প্রশাসন স্যোস্যাল মিডিয়াতে অতিরিক্ত ভাড়া নিলেই পদক্ষেপ নেবে এমন বার্তা দিয়েছিল। কিন্তু পাবনা ছাড়ার সময় বুঝতে পারলাম কোনো পদক্ষেপ নেই। বাস মালিকরা ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করে নিচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের পকেট কেটে।
গত সোমবার (৪ জুন) পাবনার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক শাফিউল ইসলাম বলেছিলেন, বাস মালিকদের নিয়ে মিটিং করে ভাড়া না বাড়ানোর জন্য সর্তক করে দেওয়া হয়েছে। তারপরও বাড়তি ভাড়া নিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
রোববার রাতে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কারো কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে পাবনার কাজীরহাট ঘাটে স্পিড বোট, লঞ্চ ও ইঞ্জিনচালিত নৌকায় আরিচা ঘাটে পার করতে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে, এ সংক্রান্ত একটি নিউজ বার্তা২৪.কমে প্র্রকাশের পর প্রশাসনের টনক নড়ে।
শনিবার দুপুরে র্যা বের নেতৃত্বে একটি টিম সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে কয়েকটি স্পিড বোটকে জরিমানা করে। একইসঙ্গে বেশ কয়েকটি নৌকা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির জিম্মায় রাখে। আইন মেনে চালালে মুচলেকায় তাদের নৌকা ফেরত দেওয়া হবে।