ঈদে খাবারের অভাব মেটাতে সরকার দুস্থদের জন্য ভিজিএফ’র ১৫ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয়। কিন্তু ঈদ শেষ হলেও লক্ষ্মীপুরের রামগতির আটটি ইউনিয়নের সাতটিতেই দুস্থরা এখনো চাল পাননি। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের খামখেয়ালিপনার কারণেই দুস্থরা এ চাল পায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ রয়েছে, আটটি ইউনিয়ন পরিষদের প্রত্যেক চেয়ারম্যানের কাছ থেকে শতকরা ২৫টি ভিজিএফ কার্ডের চাল দাবি করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরাফ উদ্দিন আজাদ সোহেল। সরকারি নিয়ম পরিপন্থি এ দাবি ছিল চেয়ারম্যানের খামখেয়ালিপনা। এ কারণে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় থেকে চাল নেননি।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা চেয়ারম্যান বলছেন, শিগগিরই চাল বিতরণ শেষ করা হবে।
জানা গেছে, এবার রামগতি উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের জন্য প্রায় ২০২ মেট্টিক টন ভিজিএফ’র চাল বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। ওইসব ইউনিয়নের ১৩ হাজার ৪৯৭ জন কার্ডধারী দুস্থরা প্রত্যেকে ১৫ কেজি করে এ চাল পাবে। কিন্ত উপজেলার চরবাদাম ছাড়া অন্য কোনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এখনো পর্যন্ত চাল নেননি।
এদিকে, ঈদের আগেই চরবাদাম ইউনিয়নে বরাদ্দ হওয়া প্রায় সবগুলো চাল বিতরণ করা হয়েছে। ইউনিয়নটিতে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কার্ডধারী রয়েছেন।
অন্যদিকে, মেঘনার ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে উপকূলীয় এ উপজেলার মানুষগুলো খুব কষ্টের দিনাতিপাত করছেন। কৃষি কাজ ও নদীতে মাছ ধরেই তাদের সংসার চলে। কিন্তু মার্চ-এপ্রিল নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে নামলেও গত একমাস কাঙ্ক্ষিত ইলিশ ধরা পড়েনি জেলেদের জালে। এতে ধারদেনা করে কোনোরকম তাদেরকে ঈদ কাটাতে হয়েছে। ঈদের আগে ভিজিএফ’র চালগুলো পেলে ঈদটি তারা খুশিতে কাটাতে পারতেন।
কিন্তু পাশ্ববর্তী উপজেলার দুস্থরা ভিজিএফের চাল পেলেও রামগতিতে দেওয়া হয়নি। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় ফণির আঘাতে এ জনপদের তিন শতাধিক কাঁচা ও টিনসেট ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চারজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তাদের কাছে শতকরা ২৫টি করে নাম দাবি করেছেন। এটি সম্পূর্ণ সরকারি নিয়ম পরিপন্থি। বিগত দিনে কোনো উপজেলা চেয়ারম্যান এরকম দাবি করেননি। ঈদে দুস্থদের কষ্ট লাঘবের জন্য সরকার চাল দিলেও চেয়ারম্যানের অযৌক্তিক লোভের কারণে তা বিতরণ সম্ভব হয়নি।
চরআলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন লিটন চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ঈদের আগেই আমার ইউনিয়নে ১ হাজার ৫৮১ জনের তালিকা করে উপজেলায় জমা দিয়েছি। জটিলতার কারণে যথাসময়ে চালগুলো বিতরণ করা যায়নি। এতে সরকারের উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে।’
রামগতি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আমান উল্লাহ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ভিজিএফের চালগুলো ঈদের আগেই বিতরণের কথা ছিল। নানা কারণে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই বাকি চালগুলো বিতরণ করা হবে।’
অভিযোগ অস্বীকার করে রামগতি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরাফ উদ্দিন আজাদ সোহেল বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগটি সত্য নয়। ঈদের আগে মৎস্য বিভাগের তালিকা অনুযায়ী জেলেদের চাল দিতে হয়েছে। এ কারণে দুস্থদের চাল বিতরণ করতে পারিনি। সঠিকভাবে দুস্থদের নামের তালিকা করতে বলা হয়েছে। খুব শিগগিরই চালগুলো বিতরণ করা হবে।’