নোয়াখালীতে গণপরিবহনে নৈরাজ্য, দ্বিগুণ ভাড়া আদায়

নোয়াখালী, দেশের খবর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নোয়াখালী | 2023-08-21 23:47:12

ঈদের ছুটি শেষে নোয়াখালী থেকে কর্মস্থলে ফেরার পথে পরিবহন শ্রমিকরা যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছে। এ নিয়ে যাত্রীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিবহন সুবিধা না পেয়েও চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা।

গনপরিবহনের এমন ভাড়া বৃদ্ধির ফলে চরম বিড়ম্বনায় পড়েছেন ঢাকা-চট্টগ্রামসহ জেলার বাহিরে থেকে আসা কর্মরত বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। তারা ভাড়া বৃদ্ধি রোধে পরিবহন আইনের দাবি করেছেন।

তবে বাস মালিক নেতাদের দাবি-বাস ভাড়া কিছুটা বৃদ্ধি করা হলেও যাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধায় অন্যবারের তুলনায় পর্যাপ্ত বাস সার্ভিস রয়েছে। ছেড়ে যাওয়ার পথে পর্যাপ্ত যাত্রী থাকলেও আসার পথে যাত্রীশূন্য গাড়ি নিয়ে ফিরতে হচ্ছে বলেও বাস মালিক নেতারা অভিযোগ করেন।

অন্যদিকে, গণপরিবহনে কয়েকটি চক্রের চাঁদাবাজিতে যানবাহনের চালক, মালিকরা অনেকটা অসহায় হয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন বলেও দাবি পরিবহন মালিকদের। জেলার মহাসড়কে সড়ক ক্লিয়ার ফি, টার্মিনাল সিরিয়াল, পার্কিং ফির নামে বেপরোয়া চাঁদাবাজি যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এ কারণে রোববার (৯ জুন) জেলার সর্ববৃহৎ বাস টার্মিনাল সোনাপুর বাস স্ট্যান্ডে হিমাচল এবং লাল সবুজ পরিবহনে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে জরিমানা করেছেন।

ভাড়া বেশি নিলেও যাত্রীদের ভিড় কমেনি, ছবি: বার্তা২৪

 

নোয়াখালী-ঢাকা রুটে হিমাচল, লাল-সবুজ ও একুশে এক্সপ্রেস প্রতি জনের বাস ভাড়া ৩৮০ টাকার স্থলে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা আদায় করছে। নোয়াখালী-চট্টগ্রামগামী বাঁধন, রেসালাহ, শাহী ও জোনাকি পরিবহন ২০০ টাকার পরিবর্তে ৩০০ থেকে ৩৮০ টাকা ভাড়া আদায় করছে।

উপকূলে নোয়াখালী থেকে কুমিল্লার নির্ধারিত ভাড়া ১২০ টাকার স্থলে নেয়া হচ্ছে ১৮০ টাকা। বসুরহাট-ঢাকা রুটে ড্রিম লাইন পরিবহন ৩০০ টাকার ভাড়া ৩৭০ টাকা আদায় করছে।

এদিকে, বসুরহাট-চট্টগ্রাম রুটে বসুরহাট এক্সপ্রেসে ১৮০ টাকার ভাড়া ২৫০ টাকা আদায় করছে।

জেলার সোনাপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে ফেনীগামী সুগন্ধা সুপার সার্ভিস, লক্ষ্মীপুরগামী আনন্দ পরিবহন, রামগঞ্জগামী জননী পরিবহন, চেয়ারম্যান ঘাটগামী সুবর্ণ সুপার সার্ভিস, রামগতিগামী সুবর্ণ সুপার সার্ভিস যাত্রীদের কাছ থেকেও দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছে। শুধু বাস নয়, সিএনজিচালিত ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাসহ ছোট পরিবহনগুলোতেও দ্বিগুণ ভাড়া নেয়া হচ্ছে।

ঢাকাগামী বাসচালক আবদুর রশিদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সোনাপুর থেকে শুরু করে মাইজদী নতুন বাসস্ট্যান্ড, বেগমগঞ্জের চৌরাস্তা, সোনাইমুড়ি, কুমিল্লার একাধিক জায়গায় চাঁদা দিতে হয়। এজন্য ভাড়া বাড়িয়ে নিচ্ছি।’

অটোরিকশা চালক মোজ্জামেল হোসেন বলেন, ‘প্রতি যাত্রীর কাছ থেকে ১০ টাকার পরিবর্তে ২০ টাকা নিচ্ছি। আগে শ্রমিক সংগঠন, মালিক সমিতি, শ্রমিক কল্যাণ ফান্ড, পৌরসভাসহ বিভিন্ন চাঁদা বাবদ ৮০ টাকা দিতে হতো। এখন ঈদকে কেন্দ্র করে সেটা দ্বিগুণ হয়েছে। ফলে বাড়তি ভাড়া না নিলে নিজের খরচ তোলা সম্ভব হবে না।

নোয়াখালী জেলা যুবলীগের সাবেক নেতা রেদোয়ানুল কবির ক্ষোভ প্রকাশ করে তার ফেসবুকে পোষ্ট দিয়ে বলেন, ‘গাড়িতে চাঁদা আদায় করে আজ অনেকে কোটিপতি। ভাড়া কমাতে হলে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে।’

নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আবু ইউসূফ বলেন, ‘ঈদকে পুঁজি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কারী পরিবহন-মালিকদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত একাধিক পরিবহন ও ব্যক্তিকে জরিমানা করেছে। চাঁদাবাজির ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর