ময়মনসিংহের গৌরীপুরের সহনাটি ইউনিয়নের টেঙ্গাপাড়া গ্রামে ডয়কা নদীর উপর নির্মিত বাঁশের সাঁকোটি ভেঙে পড়ায় গৌরীপুর ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার ১৫ গ্রামের অর্ধলক্ষ মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। নতুন করে সাঁকো নির্মিত না হওয়ায় প্রতিদিন দুই উপজেলার শত শত মানুষ ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় নদী পার হচ্ছেন।
টেঙ্গাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা এখলাস উদ্দিন বলেন, বর্ষাকালে নদীতে নৌকা চলাচল বন্ধ থাকে। তখন গ্রামবাসীকে বিকল্প পথে ১২ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে নদীর অন্য পাড়ে যেতে হয়। সাঁকোটি নতুন করে তৈরি করলে প্রায় ২ লাখ টাকা প্রয়োজন। কিন্তু আমরা নদীতে বাঁশের সাঁকো চাই না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি পাকা সেতু চাই।
স্থানীয় ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সহনাটি ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ডয়কা নদী গৌরীপুর ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সীমানা ভাগ করেছে। নদীর পূর্ব পাড়ে গৌরীপুরের সহনাটি ইউনিয়নের টেঙ্গাপাড়া গ্রাম। পশ্চিমপাড়ে ঈশ্বরগঞ্জের সোহাগী ইউনিয়নের মাইজহাটি গ্রাম। নদীতে সেতু না থাকায় স্বাধীনতার পর থেকেই দুই উপজেলার টেঙ্গাপাড়া, পল্টিপাড়া, সানিয়াপাড়া, শাহবাজপুর, ধোপাজাঙ্গালিয়া, বড়ইবাড়ি, মাসকান্দা, মাইজহাটি, জিগাতলা, সোহাগী, মমরুজপুরসহ ১৫ গ্রামের মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ডিঙি নৌকায় নদী পার হতেন। ২০১৭ সালে সহনাটি ইউনিয়নের গ্রামবাসীরা চাঁদা তুলে নদীর উপর ২২০ হাত লম্বা বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেন।
এরপর সহনাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান সাঁকোটি চলাচলের উপযোগী করার জন্য টেঙ্গাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে নদীর পাড় পর্যন্ত ১ কিলোমিটার পথ মাটি কেটে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে দেন। কিন্তু চলতি বছরের শুরুতেই বাঁশের সাঁকোটির বিভিন্ন অংশ নদীতে ভেঙে পড়ে যায়।
মঙ্গলবার (১১ জুন) সকালে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে ডয়কা নদীর উপর নির্মিত বাঁশের সাঁকোর কাঠামো অত্যন্ত দুর্বল হয়ে গেছে। ভেঙে পড়ছে সাঁকোর খুঁটি ও পাঠাতনের বাঁশ। গ্রামবাসী ও শিক্ষার্থীরা কাদাপানি মাড়িয়ে ডিঙি নৌকায় নদী পার হচ্ছে।
ঈশ্বরগঞ্জ ডিগ্রি (অনার্স) কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কায়েস আহমেদ বলেন, সহনাটি ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী প্রতিদিন ডিঙি নৌকায় নদী পার হয়ে ঈশ্বরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ, সোহাগী উচ্চ বিদ্যালয় ও স্বপ্নসিঁড়ি গার্লস স্কুলে এসে পড়াশোনা করে। কিন্ত নদীতে সেতু না থাকা ও বর্ষাকালে নৌকা চলাচল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
সহনাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, বাঁশের সাঁকোটি ভেঙে পড়ায় দুই উপজেলার ১৫ গ্রামের মানুষ ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় ডয়কা নদী পার হচ্ছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে সরজমিনে এনে সেতু না থাকার দুর্ভোগের বিষয়টি দেখিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ উদ্যোগ নেয়নি।
উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) আবু সালেহ মো. ওয়াহিদুল হক বলেন, ডয়কা নদীর উপর সেতু না থাকার বিষয়টি আমার জানা নেই। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সেতু নির্মাণের সার্বিক বিষয় নিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সেতু নির্মাণের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।