ডানাহীন পাখি উড়ছে নিরবধি

ফরিদপুর, দেশের খবর

রেজাউল করিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফরিদপুর | 2023-08-21 14:24:52

পাখি। সে তো উড়বেই। কিন্তু যদি ডানা না থাকে? তাহলে তো উড়ে বেড়ানোর স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে! কিন্তু ফরিদপুরে নাঈমা সুলতানা পাখি যেন ডানার কাছে হার না মানা পাখি। আর দশজনের মতো নয়। একজন বিশেষ মানুষ। সব থাকতেও যেন কিছু নেই। তাতে কী, পাখিকে দমিয়ে রাখা যায়নি। পাখি উড়ছেই।

ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর ইউনিয়নের নাদের হোসেন ও শাহেদা বেগম দম্পতির প্রথম সন্তান নাঈমা সুলতানা পাখি। জন্ম থেকে নানা রোগ ছিল শরীরে। চিকিৎসার পর চিকিৎসা চলেছে। এক পর্যায়ে মা বাবা জানতে পারে অন্য সব রোগ ভালো হলেও পাখি উচ্চতায় খুব একটা বড় হবে না। পাখির বর্তমান বয়স ২০ বছর। উচ্চতা মাত্র ২৮ ইঞ্চি।

বামন হয়ে জন্ম নেওয়া পাখি পারিবারিক ও সামাজিক বাধা পেরিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। এ বছর ফরিদপুর মুসলিম মিশন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন। ভালো ফলাফল আশা করছেন। এরপর ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবেন তিনি।

পাখির মা শাহেদা বেগম বার্তা২৪.কমকে জানান, পাখির আরও দুটি বোন আছে। মেজ বোন হাফছা এবার এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। ছোট বোন ছামিয়া পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে পাখির বাবা বাল্ব সমস্যা নিয়ে শয্যাশায়ী।

মঙ্গলবার (১১ জুন) দুপুরে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বিএফএফের শিক্ষা অনুদান বিতরণ অনুষ্ঠানে পাখির সঙ্গে পরিচয় হয় বার্তা২৪.কমের এই প্রতিনিধির। ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া পাখির হাতে শিক্ষাবৃত্তি তুলে দেন। এ সময় তার লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়ে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করেন।

পাখি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘পড়াশোনা শেষ করে আমি সরকারি চাকরি করতে চাই। আরও ৯ বছর আগে বাবা যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন আমার পড়ালেখা অনিশ্চিত হয়ে যায়। কিন্তু মা সব সময় পাশে ছিল। আর আমিও চেষ্টা করেছি। কখনো নিজেকে ছোট মনে করিনি। ঠিকমতো লেখাপড়া করে গেছি।’

বিএফএফের নির্বাহী পরিচালক আ ন ম ফজলুল হাদী সাব্বির বলেন, ‘১০ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে বছরে দুইবার অনুদান দেয়া হয়। এর মধ্যে পাখিও রয়েছে। আমরা এই প্রকল্পের বাইরেও পাখির পাশে থাকব।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর