কেন আলোর মুখ দেখছে না রোহিঙ্গাদের নিয়ে নেয়া সিদ্ধান্তগুলো?

কক্সবাজার, দেশের খবর

মুহিববুল্লাহ মুহিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, কক্সবাজার, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 02:13:39

গত বছরের ১৫ নভেম্বর প্রথম পর্যায়ে ২৯৮ জন রোহিঙ্গাকে স্বদেশে পাঠানোর উদ্যোগ নেয় সরকার। কিন্তু ওইদিনই মিয়ানমারে না যাওয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে রোহিঙ্গারা। এতে থমকে যায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া।

সেদিন রোহিঙ্গাদের স্বদেশে পাঠাতে প্রশাসন যখন ব্যস্ত, তখন দাতা সংস্থাগুলো ছিল নীরব। অভিযোগ আছে, প্রত্যাবাসনের বিরোধিতাসহ রোহিঙ্গাদের সরকারের সিদ্ধান্ত বিরোধী আন্দোলনের উসকানি দিয়ে আসছে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো।

জানা যায়, বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে ঐক্যমতে আসে বিশ্ব। কিন্তু কার্যত তা বাস্তবায়নে কোনো ধরনের ভূমিকা দেখা যায়নি। বরং প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করলেই রোহিঙ্গারা তাদের স্ব-স্ব ক্যাম্পে প্রত্যাবাসন বিরোধী বিক্ষোভে নেমে পড়ে। এ অবস্থায় বার বার চেষ্টা করেও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। শুধু তাই নয়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাঁটা তার দেয়ার প্রস্তাবে আপত্তি, রোহিঙ্গাদের স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা না করতে সরকারি আদেশের বিরোধীতাসহ নানা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান করছে দাতাসংস্থাগুলো।

অন্যদিকে ক্যাম্পগুলোতে বেড়েই চলেছে হত্যা, গুম, অপহরণসহ নানা ঘটনা। রয়েছে মাদক পাচারের ঘটনাও। সরকারের ইয়াবা বিরোধী অভিযানের মধ্যেও একাধিক রোহিঙ্গা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। আটকও হয়েছে অনেক রোহিঙ্গা। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে বড় ধরনের নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা করছে কক্সবাজারের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

কক্সবাজারের সিনিয়র সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি আবু তাহের চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে জানান, মিয়ানমার এমনিতেই রোহিঙ্গাদের নিতে রাজি নয়। পরিকল্পিতভাবে তাদেরকে নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত করে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে। সেখানে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য চাপ তৈরি না করে যদি তাদের এখানে থাকার জন্য উৎসাহিত করা হয়, তাহলে দাতা সংস্থাগুলোর ভূমিকা মিয়ানমারের পক্ষেই যায়।

কিন্তু রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তাকারী সংস্থা ইন্টার সেক্টর কো অর্ডিনেশন গ্রুপের (আইএসসিজি) মুখপাত্র সৈকত বিশ্বাস জানান, তারা কখনোই প্রত্যাবাসন বিরোধী নয়। প্রত্যাবাসন হতে হবে নিরাপদ ও স্বেচ্ছা প্রণোদিত। দাতা সংস্থাগুলো চায় রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় মিয়ানমার ফিরে যাক। এটাই এ সংকট সমাধানের একমাত্র মাধ্যম।

তবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে নীরব থাকলেও তাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিরুদ্ধে ঠিকই সোচ্চার দাতা সংস্থাগুলো। তাদেরই আপত্তির মুখে থমকে আছে রোহিঙ্গা স্থানান্তর প্রক্রিয়া। সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অনুষ্ঠিত এক মহড়া অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আপত্তির কারণে ভাসানচর প্রক্রিয়া থমকে গেছে। তারা ৫২টি শর্ত দিয়েছে। যে শর্তগুলো পূরণের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। পুনরায় ভাসানচর প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রতিমন্ত্রী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র স্টিফেন পেট্টিসন বার্তা২৪.কমকে জানান, ভাসানচর রোহিঙ্গাদের জন্য কতোটা নিরাপদ তা যাচাই করার প্রয়োজন আছে। এখানে তারা যে সকল সুবিধা পাচ্ছে তা ভাসানচরে পাবে কিনা জানতে হবে। ভাসানচর এখন পর্যন্ত একটি প্রস্তাবনা। এ বিষয়ে তারা আরও কথা বলতে চান। জানতে চান বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৪ আগস্টে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা এখন প্রায় ১১ লাখ। উখিয়া-টেকনাফের প্রায় ৩৪টি ক্যাম্পে অস্থায়ী বসবাস তাদের। স্বাস্থ্য-স্যানিটেশনসহ সব ধরনের সার্বিক সহযোগিতা করে আসছে বাংলাদেশ সরকার।

এ সম্পর্কিত আরও খবর