‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ, সময় এখন আমাদের’ শিরোনামে বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) দেশের ৪৮ তম বাজেট ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ২০১৯-২০ অর্থবছরে জনসন্তুষ্টির কথা বাজেটে বিবেচনা করে বেশকিছু চমক দেখানো হলেও সু-সংবাদ আসেনি হাওর অঞ্চলের জনসাধারণের।
তাদের প্রত্যাশা ছিল- হাওবাসীর দুঃখগাঁথা জীবন সংগ্রামের কথা বিবেচনা করে এবারের বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ ও পরিকল্পনা রাখা হবে। হাওরের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সামগ্রিক উন্নয়নে বিশেষ বরাদ্দ থাকবে।
প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষি খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৪ হাজার ৫৩ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে প্রায় এক হাজার ২৬১ কোটি টাকা বেশি।
আগামী অর্থবছরে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া মোকাবিলায় গবেষণার মাধ্যমে বন্যা, খরা, লবণাক্ত ও অধিক তাপমাত্রা সহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবন কার্যক্রম জোরদার করা হবে। শস্যের বহুমুখীকরণ কার্যক্রম সম্প্রসারণ, জৈব বালাই ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম জনপ্রিয়করণ, খামার যান্ত্রিকীকরণ জোরদার করা হবে। বহুমুখী পাট পণ্য উদ্ভাবনের গবেষণা কার্যক্রম চলমান থাকবে।
হাওরবাসীদের দাবি, গেল দুই বছর হাওরের কৃষকরা একটি জমির ধানও সঠিকভাবে ঘরে তুলতে পারেনি। অকাল ব্যনায় বিস্তীর্ণ হাওরের ফসল পানির নিচে তলিয়ে যায়। তাই অকাল বন্যা রোধে বিশেষ বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন ছিল।
হাওরবাসীর সব চেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয় হচ্ছে বাঁধ নির্মাণ। হাওরের এই বাঁধের অভাবে প্রতি বছর লাখো কৃষকদের পথে বসতে হয়। সেই বাঁধগুলো বিশেষ পদ্ধতিতে নির্মাণের জন্য আলাদা বরাদ্দের প্রয়োজন ছিল।
কৃষকদের মতে, হাওর সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ নদীর নাব্যতা কমে যাওয়া। বছরের পর বছর পলি জমে হাওর এলাকার নদীগুলোর নাব্যতা ও পানি ধারণক্ষমতা কমে গেছে। তাই পাহাড়ি ঢলে সামান্য পানি এলেই বাঁধ ভেঙে বা উপচে তা হাওরে প্রবেশ করে। তাই বাজেটে হাওর এলাকার নদীগুলো খননের জন্য বড় ধরনের বরাদ্দ আশা করেছিলেন হাওরবাসী।
এদিকে, বিস্তীর্ণ হাওরজুড়ে এখনও তেমন স্থলপথ সৃষ্টি হয়নি। ফলে যাতায়াত দুরবস্থার কারণে ধান ঘরে তুলতে ভোগান্তির পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা। বছরের পর বছর ধরে এ অবস্থা চলে আসলেও সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না সরকার।
জানা যায়, শুধু হবিগঞ্জে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৫০০’র অধিক হাওর রয়েছে। কোনো কোনো হাওরের দূরত্ব গ্রাম থেকে প্রায় ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার। এসব হাওরে চাষাবাদ করতে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় কৃষকদের। হাওরে যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় জমির আল দিয়ে ২০/২৫ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে চাষাবাদ করতে যেতে হয়।
বিশেষ করে বৈশাখ মাসে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়তে হয় কৃষকদের। এ সময় বোরো ধান ঘরে তুলেন হাওরের কৃষকরা। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না থাকার কারণে দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে হাওরের কৃষকদের। সেই সাথে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা, বাড়ছে শ্রমিক সংকট।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সদস্য এমদাদুল হোসেন খান বলেন, ‘কৃষিবান্ধব এই সরকারের প্রতি হাওরবাসীর অনেক প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু বাজেট নিয়ে এখন হাওরের জনগোষ্ঠির হতাশা ছাড়া কিছুই নেই।’
সাহিত্য পত্রিকা ‘তরঙ্গ’র সম্পাদক শিব্বির আহমেদ আরজু বলেন, ‘হাওরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ‘হাওর উন্নয়ন’ নমে একটি বিশেষ বরাদ্দ রাখার। এ জন্য অনেক দাবিও করা হয়েছিল। কিন্তু বাজেটে এ রকম কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। যা সত্যি হাওরবাসীর জন্য দুঃখের বিষয়।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘মানুষের যে মৌলিক অধিকারগুলো রয়েছে তাও হাওরবাসী পান না। শিক্ষা, চিকিৎসা, খাদ্য সবগুলো বিষয় থেকেই হাওর অঞ্চলের জনগোষ্ঠী পিছিয়ে রয়েছে। প্রতিবছর বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে হাওরে কান্নার রোল পড়ে। তাই অবহেলিত এই হাওরবাসীর কষ্টের বিষয়টি বিবেচনা করে বিশেষ বরাদ্দ প্রয়োজন ছিল।’