আর মাত্র চারদিন পরই অনুষ্ঠিত হবে পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন-২০১৯ সালের শেষ ধাপের নির্বাচন। রাজবাড়ীর পাঁচটি উপজেলার মধ্যে চারটি উপজেলাতে তৃতীয় ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও কালুখালী উপজেলা পরিষদে নির্বাচন বাকি ছিল। ফলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ১৮ জুন ওই উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ওই নির্বাচনকে সামনে রেখে উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে কালুখালী উপজেলার ভোটের মাঠ। প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, অস্ত্র নিয়ে প্রচারণার অভিযোগ, নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেওয়াসহ প্রতিদিনই ঘটছে হামলার ঘটনা। ফলে ভোটের দিনের পরিবেশ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন সাধারণ ভোটাররা।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ রকম পরিস্থিতি থাকলে নির্বাচনের দিন মুখ ফেরিয়ে নিতে পারেন ভোটারা। তবে প্রশাসনের দাবি, আগের মতো সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ বজায় থাকবে।
কালুখালী উপজেলার নির্বাচনকে ঘিরে এরই মধ্যে পুলিশ প্রশাসনের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে। ফলে গত ১৩ জুন কালুখালী থানার ওসি এস এম আবু ফরহাদ এবং জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি কামাল হোসেন ভূঁইয়াকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয় ইসি। তাছাড়া প্রচার-প্রচারণা চালানোর সময় প্রতিপক্ষের হামলায় এরই মধ্যে জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক সোহেল রানা ও ছাত্রলীগ নেতা কামরুল হাসানসহ উভয় প্রার্থীর পাঁচজন কর্মী আহত হয়েছেন। তারা পাংশা ও রাজবাড়ী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এ ঘটনায় কালুখালী থানায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কাজী সাইফুল ইসলামের ছোট ভাই ও মাঝবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী শরিফুল ইসলামকে প্রধান করে ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
তবে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে গত ১৩ জুন জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সবাইকে নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছেন জেলা প্রশাসক মো. শওকত আলী। সভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান কাজী সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, কালুখালীতে এখন যে পরিবেশ আছে তাতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আলীউজ্জামান চৌধুরী টিটোর গুন্ডারা নৌকার সমর্থকদেরকে মারধর করছে, ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে ও মাঠে নামতে দিচ্ছে না। আমি তাদের নামের তালিকা করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছি।
স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাংবাদিক নুরে আলম সিদ্দিকী হকও একই অভিযোগ করে জানান, প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই তার শতাধিক নেতাকর্মীকে মারপিট ও লাঞ্চিত করা হয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আলীউজ্জামান চৌধুরী টিটো জানান, নির্বাচনী পরিবেশ খুবই ভালো আছে। একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তিনি বিপুল ভোটে জিতবেন। তার জনসমর্থন দেখে এবং বিজয় নিশ্চিত জেনে অন্যে প্রার্থীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। এ সময় তিনি উল্টো তার নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ করেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আপনারা বিভিন্ন পত্রিকায় এরই মধ্যে দেখেছেন একজন প্রার্থী অস্ত্র নিয়ে এবং পাশ্ববর্তী জেলা পাবনা থেকে চরমপন্থীদের ভাড়া করে এনে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে।’
সভায় রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ফজলুল করিম প্রার্থীদের অভিযোগ শুনে বলেন, ‘নির্বাচনকে ঘিরে কালুখালী উপজেলা নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। এখানে পেশিশক্তি প্রদর্শনের কোনো সুযোগ নেই। আইন-শৃঙ্খলা-বাহিনী যে কোনো ধরনের অপশক্তি রোধ করতে প্রস্তুত আছে। এখানে ভোটাররা নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে এরই মধ্যে বিশেষ টহল বাড়ানো হয়েছে। তাছাড়া নির্বাচনের দিন প্রতিটি কেন্দ্রে ১২ জন করে আনসার সদস্য, পর্যাপ্ত পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা ও সাদা পোশাকে পুলিশ দায়িত্বপালন করবে এবং এ উপজেলায় ৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হবে।’
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক শওকত আলী বলেন, ‘তৃতীয়ধাপে যেভাবে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হয়েছে এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। কোনো রকম অনিয়ম আমরা মেনে নেবনা। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন সেজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
জেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং অফিসার মো. হাবিবুর রহমান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘কালুখালী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ১৩ জুন পর্যন্ত মোট ১২টি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, কালুখালী উপজেলায় ৭টি ইউনিয়নে মোট ভোটারের সংখ্যা এক লাখ ১৭ হাজার ৭৬৭ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৫৯ হাজার ৮৫৫ ও নারী ভোটার ৫৭ হাজার ৯১২ জন। নির্বাচনে ৪৬টি ভোট কেন্দ্র, ২৯৮টি কক্ষ, ৪৬ জন প্রিজাইডিং, ২৯৮ জন সহকারি প্রিজাইডিং ও ৫৯৬ জন পোলিং অফিসার কর্মরত থাকবেন। এবারের নির্বাচনে ৩ জন চেয়ারম্যান, ৭ জন ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) এবং ৪ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হিবেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।