হবিগঞ্জ শহরে আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ সংস্থা- আইইউসিএন ঘোষিত বিপন্ন প্রাণী ‘গন্ধগোকুল’-এর দুটি বাচ্চার সন্ধান পাওয়া গেছে। স্থানীয় লোকজন এই প্রাণী সম্পর্কে ধারণা না থাকায় প্রথমে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে মো. আমিনুর রহমান তানিম নামে এক যুবকের প্রচেষ্টায় রক্ষা পায় বাচ্চা দুটি।
শনিবার (১৫ জুন) সকালে ও শুক্রবার দিবাগত রাতে শহরের শংকর বস্ত্রালয় এলাকায় এই বাচ্চা দু‘টিকে কুড়িয়ে পান স্থানীয় লোকজন। শনিবার রাত ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে বাচ্চা দুটির মাকেও একই এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়।
আমিনুর রহমান তানিম জানান, শুক্রবার রাতে স্থানীয় লোকজন একটি গন্ধগোকুলের বাচ্চা পেয়ে এটিকে মেরে ফেলতে চান। কিন্তু তিনি গিয়ে এটিকে বাঁচিয়ে বাসায় নিয়ে রাখেন। পরে শনিবার সকালে আরও একটি বাচ্চা পাওয়ার সংবাদে তিনি ছুটে যান সেখানে। বর্তমানে দু‘টি বাচ্চাই তার কাছে আছে।
তানিম জানান, বাচ্চা দুটির বয়স মাসখানেকের মতো হবে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এগুলো শারীরিকভাবে অনেকটা অসুস্থ। আপাতত কলা ও আম খাওয়ানো হচ্ছে। শারীরিকভাবে একটু সবল হলে গন্ধগোকুলের বাচ্চাগুলোকে তিনি ছেড়ে দেবেন বলেও জানান।
এ ব্যাপারে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক প্রাণিবিদ ড. মোহাম্মদ ফারুক মিয়া বলেন, ‘ছবি ও বাহ্যিক আকৃতি দেখে মনে হচ্ছে- এগুলো স্তন্যপায়ী ও মাংশাসী জাতীয় প্রাণী গন্ধগোকুল। এটি বাংলাদেশের একটি বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী। আইইউসিএন এই প্রাণীটিকে বিপন্ন ঘোষণা করেছে। প্রাণীটি সাধারণত ইঁদুর ও মৃত মুরগি খেয়ে আমাদের পরিবেশকে রক্ষা করে।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)-এর হবিগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘বন-জঙ্গল উজাড় হয়ে যাচ্ছে বিধায় খাবারের খোঁজে লোকালয়ে চলে এসেছে। ফলে এখানেই বংশ বিস্তার করছে। আমাদের নিজেদের জন্য এদের বাঁচিয়ে রাখা দরকার। প্রাকৃতিক পরিবেশে বেড়ে উঠা এসব প্রাণী বন ছেড়ে লোকালয়ে চলে আসাটা ভাবনার বিষয়।’
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি রোটারিয়ান শামীম আহছান বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে এগুলোকে খাটাস বলা হয়ে থাকে। এরা প্রাকৃতির জন্য খুব উপকারী। গন্ধগোকুল বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ।’