সাউথ ইস্ট ব্যাংক পাবনার ঈশ্বরদী শাখার প্রায় ৬ কোটি টাকা নিয়ে ‘নিরুদ্দেশ’ হওয়া ঈশ্বরদী উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি ইমরুল কায়েস সুমনের জমি, বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সকল সম্পত্তি অবশেষে নিলামে তুলছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
সাউথ ইস্ট ব্যাংক ঈশ্বরদী শাখার বর্তমানে দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার মনসুর আহমেদ বার্তা২৪.কমকে জানান, ব্যাংকের কাছে আমানত রাখা সুমনের ১২৮ দশমিক ৯৭ শতক জমিসহ তার বসত বাড়ি, সমিল, ভিটা, বাণিজ্যিক ভবন সবকিছুই নিলামে বিক্রি করার প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই নিয়ম অনুযায়ী চূড়ান্ত কার্যক্রমে যাবে ব্যাংক।
এদিকে ব্যাংকের এই টাকা খোয়া যাওয়ায় সাউথইস্ট ব্যাংকের ঈশ্বরদী শাখার ওই সময়ের দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার মোস্তাক আহমেদসহ ৪জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ইতোমধ্যে সাময়িক বরখাস্ত করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এ তথ্য নিশ্চিত করেন ম্যানেজার মনসুর।
এদিকে, ঈশ্বরদীর ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ‘ড্যাফোডিলস্’ এর মালিক আবদুল মান্নান টিপু জানান, উধাও হওয়ার আগে তার কাছে থেকে ২০ লাখ টাকা ধার নেন সুমন। প্রমাণ স্বরূপ সুমন তাকে ২০ লাখ টাকার একটি চেক প্রদান করে। নির্ধারিত সময়ের পরও টাকা ফেরত না দেয়ায় আদালতের মাধ্যমে সুমনের নামে উকিল নোটিশও পাঠান তিনি।
জানা গেছে, ঈশ্বরদী উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি ব্যবসায়ী ইমরুল কায়েস সুমনকে (৪০) গত ১১ এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানান, ব্যাংক থেকে টাকা নেয়ার পর সুমন প্রথমে ভারতে এবং পরে মালয়েশিয়া অথবা অন্য কোনো দেশে পালিয়ে গেছেন।
ব্যাংক সূত্র জানায়, গত ১১ এপ্রিল দুপুরে সাউথ ইস্ট ব্যাংক ঈশ্বরদী শাখার তৎকালীন ম্যানেজার মোস্তাক আহমেদের কাছ থেকে তিনি ২ কোটি ২৩ লাখ টাকা নগদ গ্রহণ করেন। এই টাকা ওই দিন বিকেলেই ফেরত দিয়ে ঋণ সমন্বয় করার কথা ছিল। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত টাকা জমা না দেয়া এবং সুমনের দুটি মোবাইল ফোনই বন্ধ থাকায় সাউথ ইস্ট ব্যাংক ঈশ্বরদী শাখার সে সময়ের ম্যানেজার মোস্তাক আহমেদের সন্দেহ হয়। তার বাড়িসহ সম্ভাব্য সবস্থানে খোঁজ-খবর নিয়ে সুমনের কোনো হদিস না পেয়ে তিনি বাদি হয়ে ঈশ্বরদী থানায় ওই দিন রাতে সুমনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাহাউদ্দিন ফারুকী মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এই টাকাসহ ঈশ্বরদীর একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ধার নেয়া আরও প্রায় ২ কোটি টাকাসহ প্রায় ৮ কোটি টাকা নিয়ে এখনো নিরুদ্দেশ রয়েছেন সুমন।
পুলিশ ও সাউথ ইস্ট ব্যাংকের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ইমরুল কায়েস সুমন ঈশ্বরদী পৌরসভার ঠিকাদারি করার পাশাপাশি বিকাশ লিমিটেড, ইউনিলিভার বাংলাদেশ লি. এর ঈশ্বরদী এলাকার পরিবেশক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ঈশ্বরদী ও আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসা করে আসছিলেন। সক্রিয়ভাবে বিএনপির রাজনীতি করার পাশাপাশি তিনি ‘স’ মিলসহ অন্যান্য একাধিক ব্যবসাও পরিচালনা করতেন। সাউথ ইস্ট ব্যাংক ঈশ্বরদী শাখা থেকে তিনি করাত কল, বিকাশ ও ইউনিলিভার ব্যবসা, পৌরসভার ঠিকাদারি কাজ পরিচালনাসহ নানা প্রয়োজনে বিভিন্ন সময়ে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা ঋণ নেন।