টাঙ্গাইল কারাগারে রানা, আদালতের নির্দেশ পৌঁছালেই জামিন

টাঙ্গাইল, দেশের খবর

অ‌ভি‌জিৎ ঘোষ, ডি‌স্ট্রিক্ট ক‌রেসপ‌ন্ডেন্ট টাঙ্গাইল | 2023-08-27 01:22:12

টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য টাঙ্গাইল কারাগা‌রে র‌য়ে‌ছেন সা‌বেক এম‌পি আমানুর রহমান খান রানা।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২০ জুন) ওই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ র‌য়ে‌ছে ব‌লে জা‌নি‌য়ে‌ছেন টাঙ্গাইল আদালত পরিদর্শক মো. তানভীর। তবে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশ কারাগারে পৌঁছা‌লে তি‌নি এখান থে‌কে মু‌ক্তি পা‌বেন বলে জানা গেছে।

এর আগে বুধবার (১৯ জুন) টাঙ্গাইলে যুবলীগের দুই নেতা শামীম ও মামুন হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রানাকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। এতে করে তার আর মুক্তিতে কোন বাঁধা রইল না। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. বশির উল্লাহ। রানার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী ও রুশো মোস্তফা।

আরও পড়ুন: সাবেক এমপি রানার মুক্তিতে বাধা নেই

গত ৬ মার্চ এই মামলায় তাকে ছয় মাসের জামিন দিয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদনের পর চেম্বার আদালতের বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান গত ১৪ মার্চ জামিন স্থগিত করে দেন। পরে ২৩ এপ্রিল আপিল বিভাগ ওই স্থগিতাদেশ বহাল রেখে হাইকোর্টে রুল নিষ্পত্তি করতে বলেন।
গত ১৮ জুন (মঙ্গলবার) ওই রুলের ওপর শুনানি শেষ হয়। বুধবার রুল মঞ্জুর করে রায় দেন হাইকোর্ট। এখন এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করবে।

টাঙ্গাইলের আদালত পরিদর্শক মো. তানভীর বলেন, 'যুবলীগের দুই নেতা হত্যা মামলায় আমানুর রহমান খান রানাকে উচ্চ আদালতকে জামিন দিয়েছেন। তবে আদেশের কপি এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে পৌঁছায়নি। এছাড়া বৃহস্পতিবার (২০জুন) টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ রয়েছে। এ কারণে রানাকে কাশিমপুর কারাগার থেকে টাঙ্গাইল কারাগারে আনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ফারুক হত্যা মামলায় তাকে আদালতে তোলা হবে।'

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বাঘিল ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা শামীম ও মামুন ২০১২ সালের ১৬ জুলাই তাদের বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলযোগে টাঙ্গাইলে এসে নিখোঁজ হন। ঘটনার পরদিন শামীমের মা আছিয়া খাতুন এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এক বছর পর ২০১৩ সালের ৯ জুলাই নিখোঁজ মামুনের বাবা আব্দুল আজিজ টাঙ্গাইল আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে তদন্ত করে পুলিশ ওই বছর ২১ সেপ্টেম্বর মামলাটি তালিকাভুক্ত করে।

এই মামলায় গ্রেফতার হওয়া শহরের বিশ্বাস বেতকা এলাকার খন্দকার জাহিদ গত বছর ১১ মার্চ, শাহাদত হোসেন ১৬ মার্চ এবং হিরন মিয়া ২৭ এপ্রিল আদালতে এই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তারা উল্লেখ করেন রানার দিক নির্দেশনায় যুবলীগ নেতা শামীম ও মামুনকে হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছিল।

এছাড়া টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হত্যার সঙ্গে রানার জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসলে দীর্ঘ ২২ মাস পলাতক থাকার পর ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তারপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।

ফারুক হত্যা মামলায় তিনি জামিন পেয়েছেন। তবে যুবলীগের দুই নেতা হত্যা মামলায় এর আগে দেয়া জামিন স্থগিত থাকায় তিনি কারাগারেই আছেন। কিন্তু এখন দুইটি মামলায় উচ্চ আদালত থেকে রানাকে জামিন দেয়ায় আর কারাগার থেকে মুক্তিতে কোন বাঁধা রইল না।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক আহমদের গুলিবিদ্ধ লাশ তার কলেজপাড়া এলাকার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিনদিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০১৪ সালের আগস্টে গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে এই হত্যায় তৎকালীন সাংসদ আমানুর ও তার ভাইদের জড়িত থাকার বিষয়টি বের হয়ে আসে। ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় গোয়েন্দা পুলিশ। এই মামলায় রানার ছাড়াও তার তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পাসহ ১৪জন আসামি রয়েছে।

টাঙ্গাইল জেলা কারাগারের জেল সুপার মঞ্জুর হোসেন বলেন, 'আজকে ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহনের জন্য আমানুর রহমান খান রানাকে কাশিমপুর কারাগার থেকে তাকে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে আনা হয়েছে। তিনি উচ্চ আদালত থেকে এই মামলায় জামিনে রয়েছেন। তবে যুবলীগ নেতা হত্যা মামলায়ও বুধবার উচ্চ আদালত থেকে তিনি জামিন পেয়েছেন বলে শুনেছি। আদালতের মাধ্যমে জামিনের আদেশ কারাগারে পৌছলে টাঙ্গাইল কারাগার থেকে তিনি মুক্ত হতে পারবেন।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর