রুপন্তির লাঠিয়াল হয়ে ওঠার গল্প

কুষ্টিয়া, দেশের খবর

এস এম জামাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্টি, বার্তা২৪.কম, কুষ্টিয়া | 2023-08-31 04:11:45

বাঙালি লোকজ ঐতিহ্য লাঠি খেলা। লাঠি খেলায় আমরা সাধারণত পুরুষদের অংশ নিতে দেখি। নারীর অংশগ্রহণ আগে চিন্তা করা না গেলেও এখন নারীরা লাঠিয়াল হয়ে উঠছেন। তেমনি এক নারী কুষ্টিয়ার রুপন্তি চৌধুরী। যিনি লাঠিয়াল হিসেবে শুধু দেশে নয় আন্তর্জাতিক মিডিয়াতেও সুনাম কুড়িয়েছেন।

হারিয়ে যেতে বসা গ্রামীণ ঐতিহ্য লাঠি খেলা ধরে রাখাই এখন রুপন্তির একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান। তিনি এগিয়ে চলেছেন আপন গতিতে। ঐতিহ্যকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরতে না পারলেও একজন নারী লাঠিয়াল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।

রুপন্তি যখন খুব ছোট ছিল তখন সুলতান মেলায় বাবা রতন চৌধুরীর সঙ্গে লাঠি খেলায় অংশ নিতেন। সেই থেকে রুপন্তী হয়ে উঠেছেন নারী লাঠিয়াল। লাঠি, সড়কি, তলোয়ার ও রামদা চালাতে পারেন তিনি। তারকাখ্যাতি পেতে তাকে নানা প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে হয়েছে। নিজের প্রবল ইচ্ছা ও পরিবারের সহায়তা থাকায় তাকে পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি।

গ্রামীণ লাঠি খেলায় রুপন্তি লাঠি খেলছে, ছবি: সংগৃহীত   

 

জানা যায়, রুপন্তীর দাদা ছিলেন ওস্তাদ সিরাজুল হক চৌধুরী। ১৯৩৩ সালে তিনি সারা দেশের লাঠিয়ালদের একটি সংগঠন গড়েছিলেন। যার নাম ছিল বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনী। শুধু কুষ্টিয়া নয়, সারা বাংলাদেশের মধ্যে বাঙালি লাঠি খেলার ধারক ও বাহক ছিলেন ওস্তাদ সিরাজুল হক চৌধুরী। তার মৃত্যুর পর সন্তান রতন চৌধুরী লাঠি খেলার হাল ধরেছিলেন। তিনিও অকালে মারা গেলে সংকটে পড়ে এই লাঠি খেলা। তবে সেই অবস্থার উত্তরণ ঘটেছে আজ। ঘুরে দাঁড়িয়েছে ওস্তাদ ভাইয়ের সেই হাতেগড়া ঐতিহ্য। কারণ তার নাতনী রূপন্তী সেই ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে। নিজেই হয়ে উঠেছেন লাঠিয়াল।

লাঠিয়াল হয়ে ওঠার বিষয়ে রূপন্তী চৌধুরী বার্তা২৪.কম' কে বলেন, ‘আমার দাদুভাই ওস্তাদ সিরাজুল হক চৌধুরী এ দেশে লাঠি খেলা চিনিয়েছেন। আমি তার এই প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিতে চাই। সারা দেশে তৃণমূল পর্যায়ে লাঠি খেলার সংগঠন গড়তে চাই। তবে লাঠি খেলাকে জাতীয় স্বীকৃতি দিয়ে ফেডারেশনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।’

কুষ্টিয়ার ক্রীড়া সংগঠক জহুরুল হক চৌধুরী রঞ্জু বার্তা২৪.কম'কে বলেন, ‘১৯৩৩ সালে ওস্তাদ সিরাজুল হক চৌধুরী প্রথমে নিখিলবঙ্গ লাঠিয়াল বাহিনী গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে দেশ বিভক্তির পর বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে নামকরণ করা হয়। সে সময় ৭ থেকে ১০ দিন ধরে লাঠিয়াখেলা উৎসব চলত। বর্তমানে সেই ধারা বজায় রাখার প্রয়াস চালানো হলেও অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য সরকারি পৃষ্টপোষকতা প্রয়োজন।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর