সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা মিরিকজান। পা দুটো অচল হওয়ায় হাঁটতে পারেন না। পড়ে থাকেন ভাঙা একটি কুঁড়েঘরে। আর আশপাশের মানুষের দেয়া খাবার খেয়েই দিন পার করছেন।
সম্প্রতি কালবৈশাখী ঝড়ে তার কুঁড়েঘরটি ভেঙে যায়। এরপর তার আশ্রয় হয় প্রতিবেশীর এক জরাজীর্ণ চালা ঘরে। কিন্তু ঝড়ের কবলে ওই ঘরটিও ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় বার্তা২৪.কমের মাধ্যমে সরকারের কাছে একটি ঘর ও হুইল চেয়ারের আকুতি জানিয়েছেন বৃদ্ধা মিরিকজান।
মিরিকজানের বাবার বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলায়। স্বাধীনতার পূর্বে ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর শহরের চকপাড়া গ্রামের মগর আলীর সঙ্গে বিয়ে হয় তার। দাম্পত্য জীবনে তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে ছিল। কিন্তু এখন স্বামী-সন্তানরা কেউ বেঁচে নেই। বর্তমানে মিরিকজান চকপাড়া গ্রামের ফাতেমা বেগমের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
রোববার (২৩ জুন) সকালে চকপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, জরাজীর্ণ একটি টিনের ঘরে থাকেন মিরিকজান। নিয়মিত পরিষ্কার না করায় ঘরের বেড়ায় মাকড়সার জালে ভরে গেছে। চালের ছিদ্র দিয়ে বৃষ্টি পড়ে মেঝেতে পানি জমেছে। ঘরের ভেতর ময়লা-আবর্জনা জমে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ওই ঘরের মাটিতে অর্ধ আবরণে পড়ে আছেন বৃদ্ধা মিরিকজান। মাথার সাদা চুলে জট বেঁধেছে, ভাঁজ পড়েছে শরীরের চামড়ায়। সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে দু’হাতে ভর দিয়ে ঘর থেকে উঠানে আসেন মিরিকজান।
এ সময় তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বিয়ার পর স্বামী-সন্তান লইয়্যা সুখেই আছিলাম। কিন্তু একদিন পেটের ব্যথার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পাইরা স্বামী ট্রেইনের (ট্রেন) তলে ঝাঁপ দিয়া মইরা যায়। এরপর মাইনষ্যের বাড়িত কাম কইরা সন্তান দুইডারে খাওয়াইতাম। কিন্তু হঠাৎ একদিন ট্রেইনের তলে পইড়া মাইয়াডাও মইরা যায়। কয়েক বৎসর বাদে অসুখে ভুইগ্যা ছেড়াডাও মইরা যায়। হেরপর থেইক্যা তো আমি একলাই বাঁইচ্যা আছি।’
জানা গেছে, ১০ বছর আগে পা দুটো অচল হয়ে গেলে কাজের শক্তি হারিয়ে ফেলেন মিরিকজান। এছাড়া বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগলেও স্বজনদের সহায়তা মেলে না। তাই এখন বিধবা ভাতাটাই তার একমাত্র সম্বল।
মিরিকজানের আশ্রয়দাতা ফাতেমা বেগম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমিই মিরিকজানের দেখাশোনা করি। তবে গ্রামের অনেক মানুষ তাকে খাবার দেয়। কিন্তু একটা হুইল চেয়ার না থাকায় তার চলাফেরায় কষ্ট হয়।’
এ সময় মিরিকজান বলে ওঠেন, ‘আমি স্বামী-সন্তান সব হারাইছি। তাই খালি হুইল চেয়ার না, সরকারের কাছে নতুন ঘরও চাই। আমি এহন যেই ঘরডায় থাহি, হেই ঘরডা বাতাস আইলেই লইড়্যা উডে। কোন দিন যে আমার উফরে ভাইঙ্গা পড়ে, আল্লায় জানে।’