৪০ বছরের দাবি পূরণ হচ্ছে চরভদ্রাসনবাসীর

ফরিদপুর, দেশের খবর

রেজাউল করিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফরিদপুর | 2023-08-28 08:23:14

নদীর একূল ভাঙে ওকূল গড়ে- এই তো নদীর খেলা। জনপ্রিয় গানটি বছরে পর বছর নদী ভাঙনের শিকার মানুষগুলোর জন্য শুধুই সান্তনার বাণী। বাস্তব জীবনে নদীর ভাঙনে শেষ সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার ৩ ইউনিয়নের ২৫ গ্রামের লাখো মানুষ। পদ্মার করালগ্রাসে গত ৪০ বছরে ভিটেবাড়ি হারিয়েছেন তারা। আর ভাঙনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে পুরো চরভদ্রাসন উপজেলা।

সেই চরভদ্রাসনের পদ্মা নদীর তীব্র ভাঙন কবলিত এমপিডাঙ্গী, চরহাজীগঞ্জ ও চরহোসেনপুরের সাড়ে তিন কিলোমিটার নদী শাসনের কাজ শুরু করেছে ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরই মধ্যে প্রথম পর্যায়ে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। আর তাতেই আশায় বুক বেঁধেছে উপজেলাবাসী।

এমপিডাঙ্গীর জরিনা বেগম বার্তা২৪.কমকে বলেন, গত ১০/১২ বছরের ভাঙতে ভাঙতে এখন আমার ঘর ধরে গেছে। এ বছর যদি ভাঙন ঠেকানো না যায়, তাহলে মারা যাবো। আমার সব শেষ হয়ে যাবে। আমরা সন্তানদের নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই। ভাঙনরোধে সরকারি উদ্যোগের প্রশংসা করেন তিনি বলেন, ভাবছিলাম এবার ভিটেবাড়ি ভেঙে যাবে। কিন্তু যে কাজ হচ্ছে, তাতে আশা করছি রক্ষা পাবো।

শেখ হারুন বলেন, গত ৩০ বছরে ২/৩ বার ভাঙনের শিকার হয়েছি। এবার ভাঙলে আর যাওয়ার কোনো জায়গা নাই। অনেকদিন পর হলেও সরকার যে কাজের উদ্যোগ নিয়েছে তাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি আরও দাবি করেন, যে কাজ হচ্ছে- তা যেন সঠিকভাবে হয়।

শেখ সামছুল ইসলাম বলেন, নদী ভাঙতে ভাঙতে আর তেমন কিছু বাকি নাই। স্কুল, মসজিদ, মাদরাসা, রাস্তাঘাট সব গেছে। গতবার ফরিদপুর জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগের রাস্তার অংশ ভেঙেছে। এবার যদি কাজ না করা হতো, তবে শহরের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যেতো।

তিনি বলেন, এই যে কাজ হচ্ছে তা এই উপজেলাবাসীর আন্দোলনের ফসল। উপজেলার মানুষ বার বার দাবি তোলায় স্থানীয় সংসদ সদস্য মুজিবর রহমান চৌধুরী নিক্সন এগিয়ে এসে এই প্রকল্পের ব্যবস্থা করেছেন দাবি করেছেন।

স্থানীয় সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ওবায়দুল বারী দিপু বলেন, গত কয়েক বছরের ভাঙনে ৩/৪ কিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে চলে গেছে। চলমান এই কাজের ফলে এ এলাকার মানুষের ভিটেমাটি রক্ষা পাবে।
কাজের মান নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অন্যবারের তুলনায় কাজ ভালো হচ্ছে। কারণ কেন্দ্রীয়ভাবে টাস্কফোর্স টিম গঠন করে কাজ তদারকি করা হচ্ছে। প্রতি সাতদিন পর পর নতুন প্রকৌশলী আসছেন এবং কাজের মান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন।

চলতি সপ্তাহে কাজের তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত টাস্কফোর্স সদস্য প্রকৌশলী শাহ মমিনুল ইসলাম মমিন বলেন, বালুর কোয়ালিটি, বালুর ওজন, ডাপিংয়ের সংখ্যা, ডাপিংয়ের স্থানগুলো তদারকি করছি। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ডাপিং করাচ্ছি। কোনো সমস্যা মনে করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি ভুল ডাপিং হয় সে বস্তা হিসেব থেকে বাদ দিয়ে দিচ্ছি। আবার কোনো বস্তার ওজনে কম পেলে তাও বাদ করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই।

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, দুই বছর মেয়াদে ৭টি গ্রুপে ৩টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ডলি কনস্ট্রাকশন, আমিন এন্ড কোং ও খন্দকার শাহীন লিঃ কাজ করছে। এ কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। কাজের প্রথম পর্যায়ে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ডাপিং করা হবে। পরবর্তীতে শুকনো মৌসুমে সিসি ব্লক দিয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হবে।

তিনি বলেন, ওই এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এই বাঁধ নির্মাণ। তারই প্রেক্ষিতে এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কাজটি বাস্তবায়ন হলে চরভদ্রাসন উপজেলার প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষ নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর