৪৪ বছর পর রেশমের সর্বোচ্চ দাম

চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দেশের খবর

মো. তারেক রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ | 2023-08-28 14:02:36

আম, কাঁসা ও রেশমের জন্য পরিচিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ। কিন্তু দাম না পাওয়ায় চাষিরা রেশম চাষে আগ্রহ হারান। তবে ৪৪ বছর পর ভালো দাম পাওয়ায় আবারও রেশম চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা।

জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ আম ও সীমান্তবর্তী ভোলাহাট উপজেলা রেশম চাষের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছিল রেশমের ঐতিহ্য। স্থানীয় রেশম বিভাগের উদাসীনতায় চাষিরা রেশম চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। ফলে রেশম চাষ ৩০০ বিঘা থেকে ১০০ বিঘায় নেমে এসেছে।

ভোলাহাট রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ভোলাহাটের ৩৫০ জন চাষির মাধ্যমে প্রায় ২১৭ বিঘা জমিতে রেশম চাষ হয়েছে। এর মধ্যে রেশম বোর্ডের জমি ৬৭ বিঘা ও চাষিদের জমি ১৫০ বিঘা।

ভোলাহাটের যাদুনগর গ্রামের রেশম চাষি মুন্টু আলী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘প্রায় ৪২ বছর ধরে আমি রেশম চাষে জড়িত। প্রথমে ভালো দাম পাওয়ায় প্রায় পাঁচ বিঘা জমিতে রেশম চাষ করতাম। কিন্তু পরবর্তীতে দাম পড়ে যাওয়ায় রেশম চাষ কমিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু এই পেশা ছাড়তে পারিনি। এখন রেশমের দাম ৪৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকায় এবং সরকারি সুযোগ-সুবিধা বাড়ায় আবারও দুই বিঘা জমিতে রেশম চাষ করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘চলতি বছর ভোলাহাট রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয় থেকে আমি ১৫০টি ডিম নিয়েছিলাম। তা থেকে তিন মণ গুটি পেয়েছি। প্রতি মণ ১৪ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। এতে ভালো মুনাফা হয়েছে। রেশম চাষের জন্য সরকার ডিম, তুত গাছ, কাঠাপ্রতি তিন হাজার টাকা, ঘর বানানোর জন্য এককালীন ৩০ হাজার টাকা, ডালা, নেট ইত্যাদি দিয়েছে। ফলে অনেকে রেশম চাষে ঝুঁকছেন।’

রেশম চাষি মুন্টু আলী বলেন, ‘এ বছর আমি যে ফলন পেয়েছি তা আগে কখনো পাইনি। রেশম চাষে সরকারের সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ভোলাহাটের রেশমের ঐতিহ্য আবারও ফিরে আসবে।’

ভোলাহাট রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (জোনাল কার্যালয়) মো. মাসুদ রেজা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এক সময় ভোলাহাটের সব পরিবার রেশম চাষে জড়িত ছিল। কিন্তু বিএনপি সরকারের সময় ভারত ও চীন থেকে সুতা আমদানিতে শুল্ক কমিয়ে দেওয়ায় দেশে উৎপাদিত রেশমের চাহিদা কমে যায়। ফলে চাষিরা দাম না পাওয়ায় হতাশ হয়ে রেশম চাষ বন্ধ করে দেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকার রেশমের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চাষিদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাড়ায়। ফলে সম্প্রসারিত হচ্ছে রেশম চাষ। আশা করা হচ্ছে, আগামীতে ভোলাহাটে আরও বেশি রেশম চাষ হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর