মেঝেতে রক্ত, খোঁজ নেই ইয়াকুবের

ফরিদপুর, দেশের খবর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম, ফরিদপুর | 2023-09-01 20:42:21

ফরিদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দোতলা ভবনের নিচতলায় গত সাত বছর রাত কাটিয়ে আসছেন ইয়াকুব আলী শেখ (৩৮)। দিনের বেলা দক্ষিণ আলীপুরের একটি সেলুনে কাজ করতেন ইয়াকুব। স্কুল পড়ুয়া দুই সন্তান ও স্ত্রীর ব্যয় বহন করতে বিদ্যালয়টির নৈশ প্রহরীর চাকরিও নিয়েছিলেন। ভাগ্য ফেরাতে দিন-রাত পরিশ্রম করা মানুষটির ভাগ্যে কি ঘটেছে তা নিয়েই এখন যত আলোচনা। 

গতকাল সোমবার (২৪ জুন) ফরিদপুর সদর উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের বিলনালিয়া গ্রামের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন ইয়াকুব। রাতের ডিউটি কারণে সন্ধ্যায় শহরে রওনা হন।

মঙ্গলবার (২৫ জুন) সকাল ১০টার দিকে স্কুল থেকে ইয়াকুবের পরিবারকে ফোন করে জানানো হয়, স্কুলের বারান্দায় রক্ত পড়ে আছে। ইয়াকুবের কোন খোঁজ মিলছে না। এরপর স্ত্রী, তার মা, ভাইদের নিয়ে স্বামীর খোঁজে স্কুলে ছুটে আসেন। তবে ইয়াকুবের কোনো খোঁজ পায়নি তার পরিবারের সদস্যরা, শুধু মেঝেতে ভেসে যাওয়া রক্ত দেখেছে।

বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শামীমা বেগম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, সকালে স্কুলে প্রথম আসেন ঝাড়ুদার দুলাল জমাদ্দার। তিনি এসে স্কুলের গেট বন্ধ পেয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে না পেরে আমার বাড়িতে আসেন। পরে দফতরি রেজাউল করিমকে ডেকে এনে স্কুলের গেট খুলে ভেতরে প্রবেশ করি। এ সময় স্কুলের বারান্দায় রক্তাক্ত শার্ট, ফ্লোরে কয়েক জায়গায় রক্ত ও মোবাইল ফোন পরে থাকতে দেখি। তারপর পুলিশ ও ইয়াকুবের পরিবারকে খবর দেওয়া হয়।

ইয়াকুবের স্ত্রী ছকিনা বেগম জানান, গত কয়েক মাস ধরেই এখানে ডিউটি করতে চাইছিলেন না ইয়াকুব। জানুয়ারি মাসেও ল্যাব থেকে কম্পিউটার  চুরি হয়েছে। তাছাড়া মাদকসেবীদের প্রচুর আড্ডা হতো। এগুলো ইয়াকুব পছন্দ করত না। অনেকবার স্কুলে নালিশও করেছে। এছাড়া ওর সঙ্গে কারো কোনো ঝামেলা ছিল না।

ইয়াকুবের শ্যালক মিনারুল বলেন, আমার দুলাভাই গত কয়েকদিন ধরে খুব ভয়ে ছিল। কারণ স্থানীয় মাদকসেবীরা রাতে স্কুলের বারান্দায় মাদকের আড্ডা দিত। এগুলোতে তিনি বাধা দিতেন। এই কারণে দুলাভাইয়ের বেশ শত্রু তৈরি হয়েছিল। কয়েকদিন আগে দুলাভাই আমাকে বলেছিলেন, আমার স্কুলে যেতে ভয় করে। রাতে ঘুম আসলে কখন যে ওরা কি করে ফেলে তার ঠিক নাই। তুই আমার সঙ্গে চল, রাতে আমার সঙ্গে থাকবি।

ইয়াকুবের পরিবারের অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে শামীমা বলেন, মাঝে মধ্যে মাদকসেবীরা রাতে উৎপাত করত। সেগুলো ইয়াকুব আামাদের বললে আমরা এই এলাকায় থাকা গোয়েন্দা পুলিশকে মৌখিকভাবে জানাই তারা কয়েকবার ধাওয়া করে তাদের তাড়িয়ে দেয়। 

ফরিদপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আতিকুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকবভাবে কোতয়ালী থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সেখানকার আলামত দেখে মনে হয়েছে ইয়াকুবের সঙ্গে খারাপ কিছু হয়েছে। এখনও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। এই ঘটনায় কোতয়ালী থানায় স্কুলের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর