বিতর্ক থাকায় নির্মাণের প্রায় ১৫ বছর পর মুছে ফেলা হয়েছে সাতক্ষীরা কালেক্টরেট চত্বরে স্থাপিত শহীদ স্মৃতিফলকের সব নাম। যাদের নাম ছিল তাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী মানুষ, এমন অভিযোগ থাকায় স্মৃতিফলক নির্মাণের পর থেকেই বিতর্ক শুরু হয়েছিল।
২০০৫ সালের মে মাসে ১২ লাখ ৪৬ হাজার ৭০০ টাকা ব্যয়ে ওই ফলক নির্মাণ কাজ শুরু করে গণপূর্ত বিভাগ। ওই বছরের ৯ জুন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৩১ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকা সাতক্ষীরার গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে পাঠায়। সেই তালিকা অনুযায়ী মার্বেল পাথরে নাম খোদাই করে বসানো হয়। একই বছরের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হয়।
এ বিষয়ে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ইউনিটের সাবেক কমান্ডার মোশারাফ হোসেন মশু বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ফলকে যাদের নাম বসানো হয় তাদের মধ্যে কলারোয়ার বাগডাঙ্গা গ্রামের গোলাম রহমান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী ও রাজাকার ছিলেন। এছাড়াও আশাশুনির রফিকুল ইসলাম ও মোজাম্মেল হক এবং তালার সৈয়দ আবুল হোসেন বেদার বখত মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি। আরও একাধিক নাম নিয়ে বিতর্ক থাকায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা এখানে শ্রদ্ধা জানাতে আসতেন না।’
উপজেলা কমান্ডার হাসানুল ইসলাম ও গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা কামরুজ্জামান বাবু বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘২০১২ সালে স্মৃতিফলক থেকে বিতর্কিতদের নাম মুছতে মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে যান এবং কালি দিয়ে বেশ কিছু নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করেন।’
মৃক্তিযোদ্ধাদের দাবি, স্মৃতিফলকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী রাজাকার ও অমুক্তিযোদ্ধার নাম থাকলেও ১৭ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম স্থান পায়নি। তাদের মধ্যে ছিলেন- এ বি এম নাজমুল আবেদীন খোকন, মুনসুর আলী, আব্দুস সামাদ, আব্দুর রহমান, শাহাদাৎ হোসেন, আব্দুল ওহাব, গোলজার আলী, জাকারিয়া, নূর মোহাম্মদ, সোহরাব হোসেন, আবু দাউদ বিশ্বাস, নূল ইসলাম কারিগর, সুবেদার ইলিয়াস খান, আবুল কালাম আজাদ, ইঞ্জিনিয়ার আবুল কালাম আজাদ, মো. মোজাম্মেল হক ও মো. ইউনুস আলী।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বার্তা২৪.কমকে বলেন, বিতর্ক থাকায় ওই নাম ফলকটি তুলে ফেলতে গণপূর্ত বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছিলাম। বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। এখন মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আলোচনা করে ও গেজেট দেখে প্রকৃত শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম বসানো হবে। আর যদি ঐক্যমতে পৌঁছানো না যায়, তাহলে নাম ছাড়াই ‘শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভ’ হিসেবে সেটি থাকবে।