মেয়াদ শেষ ৮৫ বছর আগে, ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন

লালমনিরহাট, দেশের খবর

নিয়াজ আহমেদ সিপন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লালমনিরহাট | 2023-08-30 17:24:40

লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের একমাত্র তিস্তা রেলসেতুর মেয়াদ শেষ হয়েছে প্রায় ৮৫ বছর আগেই। বর্তমানে রেলসেতুটির কাঠের স্লিপারগুলো প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। অথচ মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে এ সেতু দিয়েই প্রতিদিন ১৮টি ট্রেন ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে চলাচল করছে।

স্থানীয়রা বলছেন, যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এর আগেই নতুন আরকেটি রেলসেতু নির্মাণের দাবি জানান তারা।

জানা গেছে, রাজধানীসহ সীমান্তবর্তী লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলায় সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের জন্য তিস্তা নদীর উপর নির্মিত হয় রেলসেতু। নর্দান বেঙ্গল স্টেট রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ১৮৩৪ সালে ২ হাজার ১১০ ফুট দৈর্ঘ্যের এ সেতুটি নির্মাণ করে। এর মেয়াদ ধরা হয়েছিল শত বছর। বর্তমানে যার বয়স চলেছে ১৮৫ বছর। অর্থাৎ মেয়াদের প্রায় দ্বিগুণ সময় পার করছে এ রেল সেতুটি।

সরেজমিনে দেখা যায়, তিস্তা রেলসেতুসহ লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের কয়েকটি রেলসেতুর উপর বসানো অর্ধশত বছরের পুরনো কাঠের স্লিপারের অধিকাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। স্লিপারের সঙ্গে লাইন আটকানোর জন্য দুটি পিন দেওয়ার কথা থাকলেও রয়েছে একটি করে। এছাড়া লাইনের ক্লিপ চুরি হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন ধরেই ‘মরণফাঁদে’ পরিণত হয়েছে রেলপথ। 

কোনো কোনো স্থানে স্লিপারে লোহার প্লেটই নেই। এছাড়া সেতুর পাশে দুটি লাইনের জোড়ায় ফিসপ্লেটে চারটি নাট-বল্টু থাকার কথা থাকলেও সেখানে রয়েছে তিনটি। দিনের পর দিন এ পথের রেললাইন ঝুঁকিতে থাকলেও কর্মীদের নজর পড়ে না।

এদিকে, মেয়াদ উত্তীর্ণ তিস্তা রেলসেতুর ভয়াবহতার কথা খোদ রেল বিভাগই স্বীকার করেছে। তবে তাদের দাবি, বিট্রিশ আমলের কাজ দেখে এখনো সেতুটি চলছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে সড়ক ও রেলপথের সকল সেতুর অবকাঠামো জরিপের নির্দেশ দিলেও তার কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ছে না।

অবশ্য রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন সম্প্রতি বলেছেন, ‘বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে নতুন আরেকটি সংযোগ হলেই ঝুঁকিপূর্ণ লালমনিরহাট রেল সেতুর পাশে আরও একটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নিবে বাংলাদেশ রেলওয়ে।’

তিস্তা রেল সেতু এলাকার রফিকুল ইসলাম জানান, ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন ট্রেন চলাচল করছে। এখানকার মানুষ সব সময় আতঙ্কে থাকে, কখন কোন দুর্ঘটনা ঘটে যায়। দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার আগেই সমাধান করা প্রয়োজন।

রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগীয় ম্যানেজার মুহাম্মদ শফিকুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘মঙ্গলবার (২৫ জুন) একনেকের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এ বিভাগের (লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম) ছোট বড় ৪০৮টি সেতুর মেরামতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিস্তা রেলসেতু মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও ঝুঁকিপূর্ণ নয়। তবুও তিস্তা রেলসেতুর পশ্চিম পাশে নতুন করে আরও একটি ডাবল ব্রোডগেজ সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে এ সেতু দিয়ে স্বাভাবিকভাবে ট্রেন চলাচল করতে পারবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর