অসুস্থ মায়ের শরীরে কাঁথা দিয়ে শেষ বিদায় নেন রিফাত

বরগুনা, দেশের খবর

শাহরিয়ার হাসান ও মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-29 19:29:22

বরগুনা থেকে: পড়ন্ত বিকেল। বাড়ির চারদিকে ঘন গাছপালা। সেখানে পাখির কিচিরমিচির শব্দ, গোধূলি বেলার সোনালী আলোটুকুও প্রায় নিভে যাচ্ছে। উঠানের উপর দোতলা ছোট টিনের ঘর। সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হওয়া সন্তানের বিছানায় হাত রেখে হাউমাউ করে কাঁদছেন অসহায় মা।

চারপাশে প্রতিবেশীরা শোকাহত মাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। কিন্তু কোনো সান্ত্বনায় শান্ত হতে পারছেন না তিনি। একটু পরপর বলছেন, ‘কে যেন ফোন দিয়ে আমার আব্বুরে কলেজে নিয়ে গেছে, আমি সেটা বলতে পারব না। আমি শুধু সবার কাছে অনুরোধ করছি। কে আমার বাবারে ফোন দিয়ে কলেজে ডেকে নিয়ে গেল, আমি একটু জানতে চাই!’

গত বুধবার (২৬ জুন) সকালে রিফাত তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে নিয়ে বরগুনা সরকারি কলেজে যান। কলেজ থেকে ফেরার পথে নয়ন, রিফাত ফরাজীসহ তাদের সহযোগীরা রিফাতের ওপর হামলা চালান। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। এতে বাধা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেন স্ত্রী আয়েশা। কিন্তু কিছুতেই হামলাকারীদের থামাতে পারছিলেন না তিনি। এরপর দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।

রিফাতের মা ও স্বজনরা, ছবি: বার্তা২৪

 

গুরুতর আহতাবস্থায় রিফাতকে প্রথমে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে ভর্তির এক ঘণ্টা পর বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

সন্তান হারা মায়ের এই আর্তনাদ কেউ সইতে পারছেন না। যারা তাকে সান্ত্বনা দিতে এসেছেন, তারাও শাড়ির আঁচলে চোখ মুছছেন।

রিফাতের মা ডেইজি আক্তার বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমি শুনেছিলাম আমার ছেলের বউকে নিয়ে কলেজে ঝামেলা চলছে। আমি চাইনি, ওইদিন রিফাত তার স্ত্রীকে নিয়ে কলেজে যাক। বারবার আমি বাবাকে নিষেধ করেছি, বাবা আমার কথা শোনেনি।’

রিফাতের মা, ছবি: বার্তা২৪ 

 

রিফাতের মা কেঁদে কেঁদে বলেন, ‘আমি অসুস্থ ছিলাম। আমি বললাম, আমি অসুস্থ তুমি আজ কলেজে যেও না বাবা। আমার কাছে থাকো। মিন্নিকে অন্য কেউ কলেজে নিয়ে যাবে। তখনো আমি বিছানায় শুয়ে আছি, একটু পর আমার কাছে এসে বসল রিফাত। মা তুমি শুয়ে থাকো বলে কাঁথা আমার শরীরের ওপর দিয়ে চলে গেল। সেই যে আমার ছেলে চলে গেল, আর ফিরে এলো না। যখন এলো তখন মৃত হয়ে।’

তিনি বলেন, ‘আজকে আমার বুক থেকে আমার সন্তান হারিয়েছে। যে আমার বুকের ধন ছিনিয়ে নিয়েছে আল্লাহ তারে যেন শাস্তি দেয়। যারা যারা এখনো পলাতক আছে, তাদেরকে পুলিশ ধরলেই আপনারা জানতে পারবেন। আমার ছেলেকে কেন এবং কিভাবে হত্যা করা হলো, আমিও সেটা শুনতে চাই।’

আরও পড়ুন: অচেনাদের আনাগোনায় আতঙ্কে মিন্নির পরিবার

                    রিফাত হত্যা মামলায় ৩ জন রিমান্ডে

এ সম্পর্কিত আরও খবর