কৃষি কাজ করে অনেকে বাড়ি-গাড়ি করছেন। এমন খবর প্রায়ই দেখা যায় গণমাধ্যমে। সেগুলো দেখেই উৎসাহিত হয়ে ব্যবসা ছেড়ে কৃষি কাজে যুক্ত হন চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের চাড়ালডাঙ্গা গ্রামের শফিকুল ইসলাম।
প্রায় ১৫ বছর কাপড়ের ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। তবে এই ব্যবসায় সংসারে স্বচ্ছলতা আসেনি তার। স্বপ্ন দেখছেন কৃষি কাজ করে কিছু একটা করবেন। তার এই স্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়ায় জমি। কারণ নিজের জমি বলতে নেই। প্রবল ইচ্ছা থাকায় শুরু করলেন অন্যের জমি লিজ নিয়ে ধান চাষ। কিন্তু ধানের যে দাম তাতে চাষের খরচ উঠানোই কঠিন। বিকল্প পথ খোঁজা শুরু করলেন। কোন ফসলে লাভের মুখ দেখবেন এমন ভাবনা থেকে পরিচিত হন বারমাসি তরমুজের সঙ্গে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাটিতে বাণিজ্যিকভাবে তরমুজের চাষ! আর তাতে লাভের মুখ দেখা, এমনটা ভাবা তো দূরের কথা, চারা লাগিয়ে তরমুজ হবে সেটাই ভাবেননি কৃষকরা। তবে সেই অবাস্তবকে বাস্তবে রূপ দেন শফিকুল ইসলাম। ২০ শতক জমিতে লাগান তরমুজের বীজ। আমের রাজ্যে তরমুজের চাষ দেখে- অনেকেই তাচ্ছিল্যের চোখে তাকান।
সাইফুল নিজেও প্রথম দিকে ছিলেন দিধা-দ্বন্দ্বে। নানা জনের নানান কথায় কান না দিয়ে তিনি চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বেবি তরমুজের (হাইব্রিড এফ-ওয়ান) বীজ রোপন করেন। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) আর্থিক সহায়তায় প্রয়াস শফিকুল ইসলামকে বীজ, সার ও প্রয়োজনীয় উপকরণ দেয়।
এক মাসের মধ্যেই তরমুজের গাছে ফুল আসে। ফুল থেকে ধরে তরমুজ। দিনে দিনে বড় হয়। সেই সঙ্গে শফিকুলের স্বপ্ন ডানা মেলে। ২০ জুন থেকে বাজারে তরমুজ বিক্রি শুরু করেন শফিকুল। সেই তরমুজ বিক্রি করে এবার ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন বলে জানান শফিকুল ইসলাম।
শফিকুল ইসলাম জানান, তার মনে একটা বিশ্বাস তৈরি হয়েছে। ১০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করে যে পরিমান না লাভ করতে পারবেন। তিনি ১০ কাঠা জমিতে তরমুজ চাষ করে তার চেয়ে বেশি লাভ করতে পারবেন।
তিনি আরও জানান, প্রথমে তিনি নিজেও বিশ্বাস করতে পারেননি, তরমুজের চাষ করে লাভবান হবেন। যার কারণে প্রথম দিকে গাছের পরিচর্যা নিতে অবহেলা করেছেন। তবে গাছে ফুল আসার পর থেকে পরিচর্যা নিতে শুরু করেন। প্রথমবার চাষাবাদ করায় একটু সমস্যা হয়েছে। পুরো জমিতে তিনি মালচিং পেপার ব্যবহার করেননি। যেটুকুতে মালচিং পেপার ব্যবহার করেছেন তাতে ফলন ভাল হয়েছে। সঠিকভাবে পরিচর্যা নিতে পারলে আরও বেশি লাভবান হতে পারতেন। তাই এবারের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আগামী বছর আরও বেশি পরিমানে তরমুজের চাষাবাদ করবেন বলে জানান।
বর্তমানে শফিকুল ইসলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জে তরমুজ চাষিদের কাছে আইডল হতে চলেছেন। তাকে দেখেই তার প্রতিবেশি আত্তাব আলী ৫ কাঠা জমিতে তরমুজ চাষ শুরু করেছেন।
চাড়ালডাঙ্গা মোড় থেকে উত্তর দিকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে রাস্তার বাম পাশে শফিকুল ইসলামের তরমুজের ক্ষেত। জামিতে গিয়ে দেখা যায়, কালো রংয়ের অনেক তরমুজ ঝুলে রয়েছে।
শফিকুল ইসলামের প্রতিবেশি এরফান আলী জানান, প্রথমে যখন শফিকুল তরমুজ গাছ লাগায় তখন আমরা বলছিলাম, সে কি করতে গেল? হাতে ধইর্যা টাকা নষ্ট! কিন্তু যখন ফলন আসল তখন আমরাই পস্তাই। বিশ্বাসই হচ্ছে না, আমাদের এলাকায় তরমুজের এতো ফলন হয়।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় গোমস্তাপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, তরমুজ চাষে ভালো লাভ করেছে শফিকুল। তাকে দেখে অন্য চাষিরা তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়েছেন। আমরাও চাই ধান চাষের পাশাপাশি এই ধরনের চাষে চাষিরা এগিয়ে আসুক। কারণ ধান চাষে পরিশ্রম বেশি, খরচ বেশি কিন্তু লাভ কম।