অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়ে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জবাসীর মনের মনি কোঠা দখল করে আছেন মোহাম্মদ জহির উদ্দিন। তিনি রামগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।
পুলিশ হয়ে সাধারণ মানুষের উপকারে আসে এমন নজির খুব কমই রয়েছে। কিন্তু সেবাই পুলিশের ধর্ম এই উক্তিটির বাস্তবে রূপ দিয়েছেন তিনি। আর তার উদ্যোগ নেওয়া মানবিক কাজগুলো রামগঞ্জবাসীর মনে নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে।
কিন্তু সরকারি চাকরি মানেই বদলি। আর সেই বদলির আদেশ হাতে পেয়েছেন এসআই জহির উদ্দিন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যক্তিগত আইডি থেকে একটি পোস্ট করেন তিনি। সেখানে লেখা হয়েছে ‘হঠাৎ বদলির আদেশপ্রাপ্ত হইলাম, খুব মিস করব রামগঞ্জের মাটি ও মানুষকে’।
এদিকে তার এ স্ট্যাটাসের পর থেকে রামগঞ্জবাসীর ফেসবুক ওয়ালে একটিই দাবি দেখা যায়, আর তা হলো- ‘এসআই জহিরের বদলির আদেশ প্রত্যাহার চাই’। লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার খান, জেলা পুলিশ সুপার আ স ম মাহাতাব উদ্দিন ও রামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেনের কাছে তাদের এ দাবি। ইতোমধ্যে বিষয়টি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
এসআই জহিরের স্ট্যাটাসের কমেন্ট বক্সে মো. ফরহাদ বিপিও লিখেছেন, ‘আপনার থেকেও রামগঞ্জের মানুষ আপনাকে বেশি মিস করবে। আপনি যা করেছেন তাদের জন্য, সারা জীবনেও তারা ভুলতে পারবে না’।
নাঈম ভূঁইয়া নামে একজন লিখেছেন, ‘ভাই-ব্রাদারগুলো থুইয়া থাকতে পারবেন অন্য কোথাও?’
তবে এসআই জহিরকে এসব মন্তব্যের উত্তর দিতে দেখা যায়নি।
জানা গেছে, জহির উদ্দিন ২০১৬ সালের ১ মে রামগঞ্জ থানায় যোগদান করেন। এরপর থেকে অসহায় মানুষদের সুখ-দুঃখে কাজ করে যাচ্ছেন। সোমবার (১ জুলাই) রাঙ্গামাটি জেলাতে বদলির আদেশের চিঠি পেয়েছেন তিনি। নোয়াখালী জেলার কবিরহাট থানার বাসিন্দা জহির উদ্দিন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জহিরের উদ্যোগে চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি উপজেলার ইছাপুর ইউনিয়নের সোন্দরা গ্রামে প্রতিবন্ধী সাগর বাদসাকে একটি দোকানঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়। ১৬ জুন চন্ডীপুর ইউনিয়নের একই পরিবারের জসিম, রাসেল, মোতালেব ও সজিব নামে চার প্রতিবন্ধীর জন্য একটি ভ্যারাইটিজ স্টোর তুলে দেন। চারজনকেই হুইল চেয়ার কিনে দিয়েছেন অবাধ চলাফেরা করার জন্য। জহির নিজে উদ্যোগ নিয়ে সমাজের বিত্তবান ও দানশীলদের সহযোগিতায় এসব মানবিক কাজ করে যাচ্ছেন।
রামগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ জহির উদ্দিন বলেন, ‘চাকরির পাশাপাশি মানুষের পাশে থেকে কাজ করার চেষ্টা করছি। পুলিশের কাজ শুধু অপরাধীকে গ্রেফতার করা নয়। দেশ ও সমাজকে সুন্দরভাবে বিনির্মাণে পুলিশও ভূমিকা রাখে। রামগঞ্জে কিছু কাজ বাকি রয়েছে। সেগুলো সম্পন্ন করার পর বদলি হলে ভালো হতো। উপজেলার নয়নপুর গ্রামে একজন প্রতিবন্ধীকে একটি ঘর করে দিয়েছি, তা হস্তান্তর করতে হবে। এছাড়া সমেষপুর গ্রামে এক অসহায় ব্যক্তির পুড়ে যাওয়া বসতঘর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। কাজটি এখনো শুরু করতে পারিনি।’