সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার বিএ কলেজ রোডে (গোলাম কিবরিয়া সড়ক) মার্কেট নির্মাণ বন্ধের দাবি উঠেছে। পৌরসভার এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করে সড়কটি প্রশস্ত করার দাবিতে মঙ্গলবার (২ জুলাই) মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।
ঘণ্টাব্যাপী ওই কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, সিরাজগঞ্জ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ সংলগ্ন গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক প্রশস্ত করা অত্যন্ত জরুরি। এখানে প্রতিনিয়ত যানজট লেগে থাকে। কলেজের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, বিঘ্ন ঘটে পরীক্ষার। তারপরও সড়ক প্রশস্ত না করে এলাকাবাসী ও কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি উপেক্ষা করে সিরাজগঞ্জ পৌরসভা এখানে বহুতল মার্কেট নির্মাণের চেষ্টা করছে। এতে সড়ক সংলগ্ন কয়েকশ’ পরিবার মূল সড়কে আসার পথ হারাবেন। অ্যাম্বুলেন্স বা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকার মত রাস্তা পাবেন না তারা। এতে তারা অরক্ষিত হয়ে পড়বেন। পয়োনিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থাও থাকবে না দীর্ঘ দিন ধরে এখানে বাস করে আসার মানুষগুলোর।
স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল আলম বলেন, সিরাজগঞ্জ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাড়াও এই সড়ক দিয়ে অন্তত ১৫টি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী চলাচল করে। ৭-৮টি এলাকার কয়েক লাখ মানুষকে এই সড়ক দিয়েই যাতায়াত করতে হয়। অথচ সরু এই সড়কে দুইটি রিকশাও একসাথে চলতে পারে না। ফলে প্রতিদিনই যানজট সৃষ্টি হয়, ভোগান্তিতে পড়েন শিক্ষক, শিক্ষার্থী আর এলাকাবাসী। এ অবস্থায় এখানে মার্কেট নির্মিত হলে আবাসিক এলাকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোনো কিছুরই আর কোনো পরিবেশ থাকবে না। বাজার বসে যাবে এই সড়কে!
স্থানীয় গৃহবধূ মোছা. হুসনে আরা পারভীন বলেন, বাড়ির সামনে মার্কেট হলে আমরা মা-বোনেরা এখানে আর বাস করতে পারবে না। ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমে আবাসিক এলাকা মার্কেট-পল্লীতে পরিণত হবে, মানুষের বসবাসের অবস্থা আর থাকবে না। পৌরবাসীকে এভাবে সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে পৌরসভা বাণিজ্যিক স্বার্থে আবাসিক এলাকায় মার্কেট নির্মাণ করতে পারে না।
স্থানীয় ব্যবসায়ী রাকিবুল ইসলাম খান বলেন, অসাধু কিছু ব্যবসায়ীর স্বার্থে, প্রভাবশালী দুয়েক নেতার প্ররোচনায় আমাদের মৌলিক অধিকার খর্ব করে এখানে মার্কেট নির্মাণের পাঁয়তারা করা হচ্ছে। এর নাম ‘মহিলা মার্কেট’ দিয়ে বিভিন্ন দাতা সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চলছে। ইতোপূর্বে বিশ্ব ব্যাংকের কর্মকর্তারা এই এলাকা পরিদর্শন করে গেছেন। তারা বলে গেছেন- প্রত্যেক বাড়িতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকার জায়গা দিয়ে মার্কেট করতে হবে। তারপরও সবার কথা অগ্রাহ্য করে পৌর কর্তৃপক্ষ জোর করে সড়ক চওড়া না করে মার্কেট করতে চায়, লাখ লাখ টাকা ভাগাভাগি করে খাবে বলে!
শফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, পৌরসভা আমাদের বের হওয়ার রাস্তা দেবে না, অথচ আমরা এই এলাকায় অন্তত তিন প্রজন্ম প্রায় ৭০ বছর হলো বসবাস করে আসছি। আমাদের পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা, গ্যাস-পানি-বিদ্যুতের সংযোগ- এসবের কী হবে! আমরা পৌরসভার নাগরিক, তাহলে আমাদের অবরুদ্ধ করে কীসের এত বাণিজ্য!
আনোয়ার হোসেন বলেন, পূর্ব পুরুষেরা এখানে জায়গা কেনার পর থেকে আজ অব্দি কোনো সরকার বা পৌর কর্তৃপক্ষ এই জায়গা নিয়ে কিছু করতে চায়নি। বরং আমরাই মাঝে মাঝে দাবি তুলেছি- এখানে সড়ক প্রশস্ত করা হোক। অথচ এবারের পৌর কর্তৃপক্ষ স্রেফ টাকার লোভে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-এলাকাবাসীর স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে এখানে মার্কেট নির্মাণ করতে চাইছে!
মোছা. নার্গিস আক্তার বলেন, আমরা এতদিন কিছু বলি নাই, মানুষ আজ রাজপথে নামতে শিখেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই দেশে যেখানে উন্নয়নের জোয়ার বইছে, মানুষ অধিকার নিয়ে স্বনির্ভর হচ্ছে, সেই দেশে পৌরসভার এই অন্যায় মানুষ মেনে নেবে না। এ যাবৎকালে কোনো দিন সিরাজগঞ্জ পৌরসভা নাগরিকদের মুখোমুখি দাঁড়ায়নি। আজ সেই পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে খাওয়া কিছু দালাল। আমরা তাদের রুখে দেব।
মো. রবিউল আলম বলেন, এদেশে ন্যায় বিচার উঠে যায় নাই। টাকার জোরে পৌর কর্তৃপক্ষ এতগুলো মানুষকে জিম্মি করতে পারে না; এসব মেনে নেওয়া হবে না। বহুবার মীমাংসার চেষ্টা করা হয়েছে, সব কিছু উপেক্ষা করে জোরপূর্বক এত মানুষকে অবরুদ্ধ করে বাণিজ্য করার ধান্দা চলছে! জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই দেশে এলাকাবাসী প্রাণ দিয়ে হলেও এমন ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেবে।
উল্লেখ্য, সিরাজগঞ্জ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ সংলগ্ন গোলাম কিবরিয়া সড়কের পাশে পৌরসভার অল্প কিছু জায়গা শুরু থেকেই ভোগ-দখল করে আসছিলেন এলাকাবাসী। দেড় বছর হলো পৌরসভা সেই জায়গা দখল মুক্ত করেছে। তবে এই জায়গার পরিমাণ নিয়েও বিতর্ক আছে। সম্প্রতি সেখানে মার্কেট নির্মাণের ঘোষণা দেওয়ায় এলাকাবাসী তার বিরোধিতা করে সড়ক প্রশস্ত করার দাবি জানায়। স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষও একই দাবিতে পৌরসভায় একাধিক বার আবেদন জানায়। তবুও সব উপেক্ষা করে মার্কেট নির্মাণের সিদ্ধান্তে অটল সিরাজগঞ্জ পৌরসভা।