ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর শহরের চকপাড়া গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব পক্ষাঘাতগ্রস্ত বৃদ্ধা মিরিকজানকে তাড়িয়ে দিয়েছেন আশ্রয়দাতা ফাতেমা বেগম। গতকাল মঙ্গলবার ঝগড়া বিবাদের সূত্র ধরে ফাতেমা বেগম নিজবাড়ি থেকে আশ্রিতা মিরিকজানকে বের করে দেন।
মিরিকজানের বাড়ি গৌরীপুর পৌর শহরের চকপাড়া গ্রামে। স্বামী মৃত মগর আলী ওরফে মকবুল। দম্পত্য-জীবনে এক ছেলে এক মেয়ে থাকলেও বর্তমানে তারাও কেউ বেঁচে নেই। পক্ষাঘাতগ্রস্ত দু’ পা অচল হয়ে যাওয়ায় মিরিকজান হাঁটতে পারতেন না। পড়ে থাকতেন ভাঙা একটি কুঁড়েঘরে। প্রতিবেশীদের দেওয়া খাবার খেয়েই করতেন দিনপার।
সম্প্রতি ঝড়ের তাণ্ডবে তার কুঁড়েঘরটি ভেঙে গেলে প্রতিবেশী ফাতেমা বেগমের জরাজীর্ণ চালাঘরে আশ্রয় নেন। কিন্তু গতকাল রোববার ফাতেমা বেগমের সাথে ঝগড়া হলে মিরিকজানকে বাড়ি থেকে বের করে দেন তিনি।
বুধবার দুপুরে চকপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, টং ঘরে পাতাভাঙা চৌকিতে বসে আছেন মিরিকজান। চোখে মুখে তার ক্ষুধার ছাপ। দুয়েকজনকে দেখলে খাবারের আকুতি জানাচ্ছেন। কিন্তু দুপুরের বেলা গড়িয়ে গেলেও তার জন্য আজ কেউ খাবার নিয়ে আসেনি।
কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে মিরিকজান বলেন, ‘ফাতেমা বাড়িত থেইক্যা খেদায়ে দেওনের পরে লগের ঘরের অনোয়ারে এই ঘরডা কইর্যা দিছে। কিন্তু ঘরে তো দরজা নাই, রাইতের আইন্ধারে শিয়াল-কুত্তা আইয়্যা পড়ে। আমার ডর করে গো বাজান। আমি লোলা মানুষ, রান্ধা-বাড়া করতারি না। আউজগা হারাডা দিন যাইতছে গা অহনো মুহে ভাত দিতারছি না।’
আশ্রয় দিয়েও তাড়িয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফাতেমা বেগম বলেন, ‘মিরিকজান আমারে গালি-গালাজ করে। আমার মাইয়্যাডার লগে খালি লাইগ্যা থাকে। তাই হেরে কইছি তুমি বাড়িত থেইক্যা বাইরইয়্যা যাও।’
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারহানা করিম বার্তা২৪.কম-কে জানান, মিরিকজানের বিষয়টি সম্পর্কে তারা অবগত। দিলেন দ্রুতই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস। প্রসঙ্গত, ২৩ জুন মাল্টিমিডিয়া অনলাইন নিউজপোর্টাল বার্তা২৪.কমে ‘সব হারিয়ে নতুন ঘর চান মিরিকজান’ শিরোনামে একটি মানবিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।