দেয়ালের পলেস্তরা খসে খসে পড়ছে, টিনের চাল ভেঙে গেছে। একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায় শ্রেনিকক্ষে। বাঁশ দিয়ে ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে টিনের চাল। যেকোন সময় ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পাঠদানের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় এমন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান চলছে যশোর সদর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের নালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
এমন অবস্থা শুধু নালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নয়। জেলার মোট ১ হাজার ২শ’ ৮৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১ শ’ ৪৭টি বিদ্যালয়ের চেহেরা একই।
নালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরহাদ হোসেন বলেন, বিদ্যালয়টির ১ম ভবন ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠার পরে ১৯৯৫ সালে দেয়াল করে টিনের চালা দেওয়া হয়। সেই টিনে মরিচা ধরেছে। কোথাও কোথাও টিনে ফুটা হয়েছে। বাঁশ দিয়ে কোন রকম জোড়াতালি দিয়ে বিদ্যালয়ের ৩শ’ ১০ শিক্ষার্থীর পাঠদান চলছে। বিভিন্ন সময় উপজেলা শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ করা হলেও কোন সুফল মেলেনি।
একই অবস্থা যশোর শহরের ঘোপ সেবা সংঘ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। বিদ্যালয়ের ভবনে দেখা দিয়েছে ফাটল, দেয়ালের পলেস্তরা খসে খসে পড়ছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাঈদা ইয়াসমিন বলেন, বিকল্প কোন ভবন না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চালানো হচ্ছে পাঠদান। ইতোমধ্যে বিদ্যালয়টি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। তার কাছে নতুন ভবনের জন্য আবেদন করেছি।
এমন একই চিত্র জেলার ১৪৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। ভবন সংস্কার না হওয়ার ফলে যেমন একদিকে বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে অন্যদিকে যেকোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা— এমনটাই মনে করছে সংশিষ্টরা।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৮টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪১টি ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় রয়েছে শার্শা উপজেলায়। এ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো হলো—উলাশী, শিববাস শালকোনা, নাভারণ রেলবাজার, বালুন্ডা, সুবর্ণখালি, বসতপুর, খলসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
সদর উপজেলাতে ১৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে টি.কে.জী. সম্মিলনী বিদ্যালয়, রামকৃষ্ণ আশ্রম বিদ্যালয়, সেবাসংঘ স্কুল, দেয়াড়া স্কুল ও চাউলিয়া স্কুল ঝুঁকিপূর্ণ। অভয়নগর উপজেলাতে ৩টি ঝুঁকিপূর্ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে পুড়াটাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কেশবপুর উপজেলাতে ৪টি ঝুঁকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে গৌরীঘোনা ইন্দ্রমতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
চৌগাছা উপজেলাতে ১২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঝুঁকিপূর্ণ। এর ভিতর হোগলাডাঙ্গা, পাতিবিলা, বল্লভপুর রামকৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। ঝিকরগাছা উপজেলাতে ২৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঝুঁকিপূর্ণ । এর মধ্যে ডহরমাগুরা, নবগ্রাম, টাত্তরা , দোস্তপুর, দেউলি নাভারণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। বাঘারপাড়া উপজেলাতে ১৫টি ঝুঁকিপূর্ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তার মধ্যে বহরমপুর, করিমপুর, পি.টি.এম, দশপাখিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।
মনিরামপুর উপজেলাতে ২৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঝুঁকিতে রয়েছে। তার মধ্যে উত্তরপাড়া, সুবলকাঠি, ভোজগাতি, লাউলি, বাটবিলা, মদনপুর, কুচলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শেখ অহিদুল আলম বলেন, যশোর জেলায় ৮টি উপজেলার ১৪৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এ সব বিদ্যালয়ে বিকল্প কোন ভবন না থাকায় বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের তালিকা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রালয়ে পাঠানো হয়েছে। চলতি বছরের ২০১৯/২০ অর্থবছরের প্রথমদিকে ভবনগুলো পুনঃনির্মাণ করা হবে।