তালতলীর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে তীব্র শিক্ষক সংকট

বরগুনা, দেশের খবর

মো. খাইরুল ইসলাম আকাশ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, বরগুনা | 2023-08-25 10:21:42

বরগুনার তালতলীতে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে চলছে তীব্র শিক্ষক সংকট। ফলে শিক্ষকের অভাবে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।

জানা গেছে, তালতলী উপজেলার ৭৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধিকাংশে রয়েছে তীব্র শিক্ষক সংকট। অনেক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষকের পদও শূন্য। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি ৪০ জন ছাত্র-ছাত্রীর বিপরীতে একজন শিক্ষক থাকার কথা। কিন্তু কোনো কোনো বিদ্যালয়ে মাত্র একজন শিক্ষক দিয়েই চলছে।

উপজেলার ৭৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ২০টি এবং সহকারী শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে ৯১টি। এর মধ্যে ৯টি স্কুলে দুইজন করে ও চারটি বিশেষ বরাদ্দের স্কুলে একজন করে শিক্ষক আছেন।

উপজেলার কলারং, গাব্বাড়ীয়া, উত্তর কড়ইরাড়িয়া, শারিকখালী, বাদুরগাছা, চাউলাপাড়া, নলবুনিয়া-আগাপাড়া, মৌরবী ও লালুপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুইজন করে শিক্ষক রয়েছে। আর একজন করে শিক্ষক রয়েছে- উত্তর গাব্বাড়ীয়া আ. হাকিম সরদার, গাবতলী, রফিকুল ইসলাম, এম.কে মজুমদার ও কাজিরখাল বিদ্যালয়ে।

শিক্ষকদের অভিযোগ, যেদিন মাসিক মিটিং বা অফিসের কোনো কাজে উপজেলায় যেতে হয়, সেদিন স্কুল বন্ধ রাখতে হয়। ফলে ব্যাহত হয় পাঠদান।

অভিভাবকদের অভিযোগ, দুই একজন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান করালে সন্তানরা কী শিখবে? আবার একজন শিক্ষক কীভাবে ৬টি শ্রেণির পাঠদান করাবেন। এভাবে পড়াশোনা হয় না।

মঙ্গলবার (৯ জুলাই) কলারং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, দুইজন শিক্ষক ১৪২ জন শিক্ষার্থীকে পড়াচ্ছেন। ফলে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। শিক্ষক সংকটের কারণে শুরুতে জাতীয় সঙ্গীতও গাওয়ানো হয়নি। স্কুলে পাঁচজন শিক্ষক থাকার কথা রয়েছে, তবে আছেন মাত্র দুইজন।

স্কুলের একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছে, নিয়মিত স্কুলে আসলেও শিক্ষক না থাকায় ক্লাস হয় না।

আবার বাদুরগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র একজন শিক্ষক ১২৪ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান করাচ্ছেন। তিনি একাই প্রথম থেকে ষষ্ঠ শ্রেণির ক্লাস নিচ্ছেন। শারিকখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চারজন শিক্ষকের বিপরীতে আছে মাত্র দুইজন।

কলারং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুমি বেগম বলেন, ‘আমাদের স্কুলে প্রধান শিক্ষকের পদটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য আছে। মাত্র দু’জন সহকারী শিক্ষক দিয়ে কোনো মতে ক্লাস নেওয়ার কাজ চলছে। ফলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে।’

একই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবুল কালাম বলেন, ‘আমি ও একজন সহকারী শিক্ষক মিলে বিদ্যালয়টি চালাচ্ছি। প্রধান শিক্ষকসহ পাঁচজন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও আছি মাত্র দুইজন।’

বাদুরগাছা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন সিকদার বলেন, ‘আমাদের গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র দুইজন শিক্ষক। যাদের মধ্যে পুরুষ সহকারী শিক্ষক আরিফ নিয়মিত স্কুলে আসেন না। ফলে প্রধান শিক্ষক রুনা লায়লা একাই স্কুলের দেখভাল করেন। তবে তিনি যেদিন অফিসের কাজে বাইরে থাকেন সেদিন স্কুল বন্ধ থাকে।’

বাদুরগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুনা লায়লা বলেন, ‘আমার সহকর্মীর অনুপস্থিতির বিষয়ে শিক্ষা অফিসে একাধিকবার রিপোর্ট করা হলেও ফল পাওয়া যায়নি। ফলে একা স্কুল পরিচালনা করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

তালতলী প্রেসক্লাবের সভাপতি আ. মুতালেব জানান, উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে তীব্র শিক্ষক সংকট রয়েছে। মূলত শিক্ষা অফিসারের গাফিলতির কারণে এমনটা হয়েছে।

তালতলী উপজেলার শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) কাজী মনিরুজ্জামান রিপন জানান, নতুন নিয়োগ শুরু হলে শিক্ষক সংকট থাকবে না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর