কুমিল্লার লাকসাম উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র সংস্কারে সাত লাখ টাকা ব্যয় বৃথা গেছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। কারণ সংস্কারকাজের চার দিনের মাথায় ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে কেন্দ্রটি। বৃষ্টির নামলেই পানি পড়ছে, মেঝে ভিজে যাচ্ছে; ওষুধ, আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতিসহ মূল্যবান নথিপত্র ভিজে যাচ্ছে। রোগী ও চিকিৎসকরা ভোগান্তিতে পড়ছেন।
লাকসাম পৌরশহরের থানা কমপ্লেক্সের অদূরে অবস্থিত লাকসাম উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি প্রায় দেড়শ বছরের পুরাতন। জমিদার আমলে প্রায় ৭০ শতক জমিতে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি স্থাপন করা হলেও এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত। হাসপাতালের সমস্যা নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে গত ১৩ মার্চ সংস্কার কাজ শুরু হয়। সংস্কারে ব্যয় হয় প্রায় সাত লাখ টাকা। কাজ পায় মেসার্স কলি এন্টারপ্রাইজ।
চৌচালা টিনশেড থেকে একচালায় রূপান্তরিত করে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি গত ৩ জুলাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু হস্তান্তরের চারদিনের মাথায় বৃষ্টির পানিতে ভিজে একাকার হয় কেন্দ্রটি।
অভিযোগ উঠেছে, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটির সংস্কারকাজ করা হয়েছে দায়সারাভাবে। অনেক কিছু নতুন লাগানোর কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি।
স্থানীয়রা জানান, টিনশেড ও বাঁশের বেড়া দিয়ে নির্মিত এক সময়কার এ দাতব্য চিকিৎসালয়টি এখন লাকসাম উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র নামে পরিচিত। এ কেন্দ্রে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা দেওয়া হয়। প্রতিদিন শতাধিক রোগী উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। যাদের অধিকাংশই হতদরিদ্র, নারী ও শিশু।
তবে এ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে এখনও আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। আধুনিক স্থাপনা, সীমানা প্রাচীর কিছুই নেই। ফলে যেকোনো সময় বেহাত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সম্পত্তি।
এদিকে, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভেতর বৃষ্টির পানি প্রবেশ করায় সেখানে পরিদর্শনে আসেন কুমিল্লা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী (স্বাস্থ্য) মোহাম্মদ রনি। তিনি জানান, এ বিষয়ে ঠিকাদারের সাথে কথা হয়েছে। পুনরায় কাজ না করলে জামানত থেকে টাকা কেটে নেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির চারপাশ অনেক নোংরা। নেই বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ, যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাটিও ময়লা ও মলমূত্রে ভরা। সামান্য বৃষ্টি হলেই কাদা-মাটিতে একাকার হয়ে যায় রাস্তাটি।
এখানে একজন মেডিকেল অফিসার, একজন মেডিকেল সহকারী, একজন ফার্মাসিস্ট, একজন সেকমো, একজন ভিজিটর, একজন এমএলএসএস, একজন আয়া থাকার কথা। কিন্তু বর্তমানে সেখানে একজন সেকমো ও একজন ভিজিটর ছাড়া বাকি পদগুলো শূন্য রয়েছে। গত বছর একজন মেডিকেল অফিসারকে পোস্টিং দেওয়া হলেও তিনি সেখানে আসেননি।
লাকসাম উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার হেদায়েত বেগম জানান, বৃষ্টির পানি প্রবেশ করায় ওষুধ, নথিপত্র, আসবাবপত্র ভিজে গেছে। ফলে রোগী দেখা সম্ভব হচ্ছে না।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নিশাত সুলতানা বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘সংস্কার কাজ শেষে গত ৩ জুলাই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি আমাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু চৌচালা ভেঙে একচালা টিনশেড দেয়ায় এবং পানির ট্যাংক ও বেসিন না থাকায় চাল দিয়ে পানি প্রবেশ করেছে। তবে এ বিষয়ে আপত্তি জানালে ঠিকাদার আবার কাজ করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের লোকবল সংকট, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হবে।’
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কলি এন্টারপ্রাইজের পরিচালক শাহাবুদ্দিন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘ইঞ্জিনিয়ারের কথা অনুযায়ী সব কাজ করা হয়েছে। তবে চাল দিয়ে পানি পড়া বন্ধ করতে সেখানে মিস্ত্রি পাঠিয়েছি।’