বিদায়ের পথে আষাঢ়, আর শ্রাবণের আগমনী বার্তার অপেক্ষায় প্রকৃতি। আষাঢ়-শ্রাবণের সন্ধিক্ষণে আকাশে মেঘ দেখা গেলেও বৃষ্টির দেখা মিলছে কম। মাঝে মাঝে বৃষ্টি হলেও তা কৃষি ও কৃষকের কোনও কাজে লাগছে না। ফলে অনাবৃষ্টিতে সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ অঞ্চলে ব্যহত হচ্ছে আমন চাষ। পাশাপাশি পানির অভাবে কৃষকরা পাটও জাগ দিতে পারছেন না।
বুধবার (১০ জুলাই) সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আলিপুর, ভোমরা, শিবপুর, আগরদাড়ি, ঝাউডাঙ্গা, বল্লী, ব্রহ্মরাজপুর, লাবসাসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, পানির অভাবে জমিতে চাষাবাদ করতে পারছেন না কৃষকরা। অনেক কৃষক বাধ্য হয়ে গভীর ও অগভীর নলকূপের পানি দিয়ে আমনের চারা রোপণ করছেন।
সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আমন চাষাবাদে শ্যালোমেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেকেই বৈদ্যুতিক পাম্প ব্যবহার করছেন। ফলে আমন আবাদ ও পাট জাগ দেওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা। এমনকি বৃষ্টির অভাবে পাটের বৃদ্ধিও আশানুরূপ হয়নি।
জেলার শ্যামনগর, কালিগঞ্জ, আশাশুনি, দেবহাটা, তালা, কলারোয়া ও সদরের ৭৮টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় আমন চাষের আশায় বুক বেঁধে ছিলেন কৃষকরা। কিন্তু অনাবৃষ্টি কৃষকদের সেই আশা নিরাশায় পরিণত হয়েছে।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চমান পর্যবেক্ষক জুলফিকার আলী রিপন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে জানান, চলতি মৌসুমে আগাম বৃষ্টি শুরু হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। গত এপ্রিলে বৃষ্টি হয়েছে ৫৬ মিলিমিটার, মে মাসে ১০৪ মিলিমিটার, জুনে ২৩৭ মিলিমিটার এবং জুলাইয়ের ১০ তারিখ পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৫ মিলিমিটার।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আমজাদ হোসেন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘দেশের অনেক জায়গায় মৌসুমি বৃষ্টি হলেও সাতক্ষীরায় কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। ফলে কৃষকরা আমন চাষ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। বীজতলাও তৈরি করতে পারছেন না। পানির অভাবে অনেকস্থানে ক্ষেত শুকিয়ে যাচ্ছে। তবে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে তাদের সেচযন্ত্র চালুর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে চার হাজারেরও বেশি যন্ত্র চালু করা হয়েছে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত মৌসুমে জেলায় ৮৪ হাজার ৯৫৭ হেক্টরের বিপরীতে আমন চাষ হয় ৮৭ হাজার ৯০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৯ হাজার ৫০ হেক্টর, কলারোয়ায় ১১ হাজার ৬০০ হেক্টর, তালায় ৮ হাজার ৩৯০ হেক্টর, দেবহাটায় ৫ হাজার ২৮০ হেক্টর, কালীগঞ্জে ১৭ হাজার ৩০ হেক্টর, আশাশুনিতে ৯ হাজার ২৪০ হেক্টরে ও শ্যামনগরে ১৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়। তবে এ বছর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯০ হাজার হেক্টর।