পঞ্চগড় জেলা শহরের বুকে নির্মিত করতোয়া সেতুটি দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। প্রতিদিন তেঁতুলিয়া থেকে ছেড়ে আসা শত শত ট্রাক পাথরসহ বিভিন্ন মালমাল ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অধিক পরিমাণে বহন করে সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করায় ঝুঁকির মুখে পড়ছে পঞ্চগড়ের এ সেতুটি।
সরেজমিন দেখা গেছে, ভারী মালামাল বোঝাই ট্রাকের যাতায়াতে খসে পড়ছে সেতুটির পলেস্তরা, উঠে যাচ্ছে ওয়ারিং কোর্স, সেতুর প্রতিটি পোল জয়েন্টের ব্যবধান ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেতুর কোনো কোনো জায়গায় রড বেরিয়ে যাচ্ছে। এদিকে সড়ক বিভাগ বারবার পাথর ও বিটুমিন দিয়ে ঝুঁকি চাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। এই অবস্থা চলতে থাকলে সেতুটির বড় ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কার কথা জানান সংশ্লিষ্টরা।
জেলা শহরে প্রবেশের একমাত্র পথে দাঁড়িয়ে থাকা ২৭৫ মিটারের সেতুটি ১৯৮৮ সালে শহরের বুকে প্রবাহিত করতোয়া নদীর ওপর নির্মিত হয়। ফলে পঞ্চগড়ের সাথে দেশের অন্য প্রান্তের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এ করতোয়া সেতু।
জেলার বিভিন্ন জায়গাসহ দেশের চতুর্থ স্থলবন্দর বাংলাবান্ধা থেকে প্রায় ৬ থেকে ৭ শতাধিক পাথর ও বালি বোঝাই ট্রাক ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত মালমাল নিয়ে এ সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করায় হুমকির মুখে সেতুটি।
সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সেতুটির সক্ষমতা অনুযায়ী দুই এক্সেল ৬ চাকার ট্রাক সর্বোচ্চ ২০ টন, তিন এক্সেল ১০ চাকার ট্রাক সর্বোচ্চ ৩০ টন ও চার এক্সেল ১৪ চাকার ট্রাক সর্বোচ্চ ৪০ টন মালমাল নিয়ে সেতুর ওপর দিয়ে পরিবহন করার নির্দেশনা থাকলেও একেকটি ট্রাক ৪০-৫০ টন মালামাল নিয়ে সেতুর ওপর দিয়ে পরিবহন করছে।
‘পঞ্চগড়বাসী’ নামে স্থানীয় সামাজিক সংগঠনের সদস্য আরিফ হোসেন জানান, সেতুর ওপর দিয়ে অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন বন্ধ না হলে সেতুর অবস্থার আরো অবনতি ঘটবে।
পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী ইভা রহমান বলেন, অনেক আতঙ্ক ও ভয়ে সেতুর ওপর চলাচল করতে হয়। কোনো ভারী যানবাহন উঠলে সেতুটি কাঁপতে থাকে।
আল মামুন নামে এক ট্রাক চালক জানান, সেতুর ওপর উঠলে সেতুটি কেঁপে উঠছে কিছুদিন থেকে। ব্যবসায়ীদের চাহিদা মতোই মালমাল পরিবহন করতে হয় তাদের।
এদিকে, বুধবার (১০ জুলাই) দুপুরে সেতুটি পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমি, পুলিশ সুপার ইউসুফ আলী, উপজেলা চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলামসহ জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ এনামুল হক প্রধান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, পঞ্চগড়ে ওভারলোড নিয়ন্ত্রণে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ। কিন্তু ব্যবসায়ীদের লাভ জড়িত থাকায় পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তবে সবার সহযোগিতা পেলে আমরা শত ভাগ ওভারলোড নিয়ন্ত্রণ করতে পারব।
পঞ্চগড় সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, সেতু বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা করতোয়া সেতুটি পরিদর্শন করেন। সেতুটির মূল কাঠামো এখনো ঠিক আছে বলে তারা জানিয়েছেন। তবে উপরের ওয়ারিং কোর্স নষ্ট হয়ে গেছে। সেটি মেরামত করতে হলে ৩ দিন সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল বন্ধ রাখতে হবে কিন্তু এই সেতুর ওপর তা বন্ধ রাখা অসম্ভব তারপরো তারা হয়তো কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তবে আমরা সড়ক বিভাগ কর্তৃক অতিরিক্ত মালামাল নিয়ে যাতায়াত না করতে বিলবোর্ড লাগিয়েছি।