কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনত হয়েছে। ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে চর-দ্বীপচরসহ তীরবর্তী নতুন অনেক এলাকা। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ।
ঘর-বাড়ি ছেড়ে বন্যা দুর্গতরা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও গবাদি প্রাণী নিয়ে পাকা সড়ক এবং উঁচু বাধে আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে নলকূপ তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি খাবারের সংকটও দেখা দিয়েছে। সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৫২ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্রের পানি নুন খাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এতে কুড়িগ্রাম সদর, উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুর, রাজারহাট ও নাগেশ্বরীসহ জেলার সবকটি উপজেলার নদ-নদী তীরবর্তী চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এসব এলাকার অন্তত প্রায় ১ লাখ মানুষ। তলিয়ে গেছে গ্রামীন রাস্তাঘাট, মাছের ঘের, শাক সবজিসহ আমন বীজতলা।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দেলওয়ার হোসেন জানান, আমার ইউনিয়নে মোট ৪১ হাজার মানুষ বসবাস করছে। এর মধ্যে প্রায় ২১ হাজার মানুষ পানিবন্দী। বন্যা কবলিতদের তালিকা তৈরি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছে। ত্রাণ সহায়তা পেলে বন্যা কবলিতদের মাঝে বিতরণ করা হবে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াছমিন জানান, কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে এবং আরো বাড়ার আশংকা রয়েছে। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইউনিয়নগুলোতে যোগাযোগ করছি তথ্য নিচ্ছি এবং এই মুহূর্ত কতগুলো মানুষ পানিবন্দী রয়েছে, কতগুলো মানুষ নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছেন, এসব তথ্য ইতিমধ্যে চলে এসেছে। সেই অনুযায়ী আমরা তালিকা তৈরি করেছি এবং ত্রাণেরও ব্যবস্থা করেছি। আমরা তালিকা অনুযায়ী এলাকাগুলোতে ত্রাণ পৌঁছে দেব। আমাদের কাছে পর্যান্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে এবং আরো প্রয়োজন হলে আমরা চাহিদা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠাব।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান জানান, আমাদের স্টকে থাকা ৫০০ মেট্রিক টন চালের মধ্যে ৫০ মেট্রিক টন চাল বন্যা কবলিতদের জন্য বরাদ্দ দিয়েছি। ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবারের মধ্যে ২ হাজার প্যাকেটই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৭ লাখ ২৫ হাজার টাকার মধ্যে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা বিতরণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া আছে। শুকনো খাবার বরাদ্দ চেয়ে চিঠি লেখা হয়েছে। পাশাপাশি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের আরো বেশি জাহিদা থাকলে সেটা দ্রুত জানাতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, ৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী