ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ-তালশহর আঞ্চলিক সড়ক সংস্কারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও ঠিকদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসী।
তাদের অভিযোগ, সড়ক সংস্কারের সব প্রস্তুতি শেষ করা হলেও কাজ শুরু করছে না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ফলে ৫টি ইউনিয়নের লাখো মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ এলাকায় ৫টি ইউনিয়ন ও জেলা সদরের সাথে আঞ্চলিক যোগাযোগের একমাত্র সড়ক আশুগঞ্জ-তালশহর সড়কটি। এই সড়কে প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ চলাচল করেন। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় সড়কে ছোট বড় খানাখন্দ সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তায় পানি জমে যায়। ফলে বিভিন্ন সময় ঘটছে দুর্ঘটনা।
এদিকে, কাজ শুরু না হওয়ার পেছনে এলজিইডি ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি আছে বলে মনে করেন এলাকাবাসী। তবে এলজিইডি কর্তৃপক্ষের দাবি, বন্যা ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।
জানা গেছে, রাস্তাটির প্রসস্তকরণ কাজ শেষ হওয়ার পর আর কোনও সংস্কার কাজ করা হয়নি। এছাড়া আশুগঞ্জ থেকে আলমনগর পর্যন্ত সড়কের দুপাশে বেশ কয়েকটি রাইস মিল থাকায় নিয়মিত ট্রাক ও ট্রাক্টর চলাচল করে। এতে রাস্তাটির ইট-সুরকি উঠে ছোট বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। বৃষ্টি হলেই এসব গর্তে পানি জমে দুর্ঘটনা ঘটে। আশুগঞ্জ উপজেলার সাথে আড়াইসিধা, তারুয়া, তালশহর, শরীফপুর ও লালপুর ইউনিয়নের যোগাযোগের একমাত্র রাস্তা এটি। তাই বাধ্য হয়েই অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে এই সড়কে চলাচল করেন সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা।
গত ১৬ জুন স্থানীয় এলজিইডি বিভাগ রাস্তাটির সংস্কারে দরপত্র আহ্বানসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে। কাজ পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স লোকমান হোসাইন অ্যান্ড মেসার্স মোস্তফা কামাল (জেভি)। এফডিডি আরআইআরপি প্রকল্পের অধীনে আট কিলোমিটার এই সড়ক সংস্কারে ব্যায় ধরা হয় পাঁচ কোটি ২৭ লাখ টাকা। কাজ শুরুর কথা ছিল গত ২৩ জুন এবং শেষ হওয়ার কথা ২০২০ সালের ১৯ মার্চ। তবে এখনও কাজ শুরু করেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
কলেজ ছাত্রী ফারজানা আক্তার জানান, প্রতিদিনই এই সড়ক দিয়ে কলেজে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু সড়কের এমন বেহাল অবস্থার কারণে কলেজে যেতে দেরি হয়। অনেক সময় রিকশা উল্টে যাত্রীরা আহত হন।
ওই সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী সিএনজি চালক আরমান জানান, সড়কে পানি জমায় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। প্রায়ই গাড়ি আটকে যাওয়ায় যাত্রীদের বিপাকে পড়তে হয়। তাছাড়া নিয়মিত গাড়ির যন্ত্রাংশও নষ্ট হচ্ছে।
কাজ শুরুর বিষয়ে জানতে মেসার্স লোকমান হোসাইন অ্যান্ড মেসার্স মোস্তফা কামাল (জেভি)- এর স্বত্বাধিকারী মো. লোকমান হোসাইনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘আমাদের কোনও গাফিলতি নেই। কারণ সারাদেশে বন্যা ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার প্রভাব ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়ও পড়েছে। প্রতিদিন বৃষ্টি হওয়ায় কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। বৃষ্টি কমলেই কাজ শুরু হবে। কাজ দেরিতে শুরু হলেও নির্ধারিত সময়েই তা শেষ করা হবে। তবে সড়কটি চলাচলের উপযোগী করতে গর্তগুলো আপাতত মাটি ও সুরকি দিয়ে বন্ধ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’