ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল-অরুয়াইল সড়কের সংস্কার কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ভাটি অঞ্চলের চলাচলের একমাত্র সড়কটিতে নিম্নমানের সরঞ্জাম ব্যবহার, রাস্তার প্রশস্ততা কমানোসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। এসব অনিয়ম সরেজমিন তদন্ত করতে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক এনামুল হক এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী শিরাজুল ইসলাম সড়কের সংস্কার কাজ সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। এসময় স্থানীয় লোকজন তাদের কাছে সড়কে সিডিউল মোতাবেক কাজের দাবি করলে, তারা ভালোভাবে কাজ সম্পন্ন করার আশ্বাস দিলেও কাজে এখনও অনিয়ম হচ্ছে বলে দাবি এলাকাবাসীর।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, জেলার সরাইল উপজেলা ও নাসিরনগর উপজেলার ভাটি অঞ্চলের প্রায় তিন লক্ষাধীক মানুষের একমাত্র চলাচলের মাধ্যম ‘সরাইল-অরুয়াইল সড়ক।’ ভাটি এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১০ সালে এই সড়ক নির্মাণ হয়। অভিযোগ রয়েছে, হাওর এলাকায় এই সড়ক নির্মাণের সময়ই নানা অনিয়ম হয়। ফলে প্রতিবছর বর্ষাকালে সড়কটির বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আর এতে সংস্কারের নামে বিভিন্ন বরাদ্দ বাস্তবায়নে লোপাটের মহোৎসব চলছে। মূলত এসব বরাদ্দে কার্যত কোনো কাজই করা হয়নি।
এদিকে দীর্ঘ ভোগান্তির পর প্রায় একবছর আগে সড়কটির একাংশের বইশ্বর মসজিদের সামনে থেকে পাকশিমুল চেয়ারম্যানের বাদির সামনে পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা সংস্কারের জন্য ৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। দরপত্রসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে কাজটি পান ‘মেসার্স হাসান এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। পরবর্তীতে এ সংস্কার কাজে আরও কিছু অর্থ বরাদ্দ আসে। শুষ্ক মৌসুমেই এ সড়কের সংস্কার কাজ করার জোর দাবি থাকলেও ঠিকাদার ধীরগতিতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, কাজে অনিয়ম করার জন্যই তিনি ধীরগতি অবলম্বন করেছেন। ঠিকাদারকে এ সংস্কার কাজে অনিয়মে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন উপজেলা এলজিইডির উপ-সহকারি প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল বাকি বিল্লাহ ও সার্ভেয়ার শফিকুর রহমান।
পাকশিমুল ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. দানা মিয়া বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, শুরু থেকে কাজে ব্যাপক অনিয়ম শুরু করেছে ঠিকাদার। পাশপাশি রাস্তার প্রসস্ততাও কমিয়েছে। রাস্তার ঢালু অংশের মাটিও চাপায়নি ভালোভাবে। যার কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তা ভেঙ্গে যাচ্ছে। আমরা বাঁধা দিলে সাময়িকভাবে কাজ বন্ধ থাকে আবারও চলে অনিয়ম। এসব অনিয়মের সাথে এলজিইডির জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীও জড়িত।
কালিশিমুল এলাকার মো. মাজু মিয়া বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, রাস্তাটি এই এলাকার সাধারণ লোকজনের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম। যে কারণে সবাই চায় কাজটি ভালোভাবে হোক। কিন্তু ঠিকাদার কারও কথা তোয়াক্কা না করে নিম্নমানের কাজ করে যাচ্ছেন।
সরাইলের অরুয়াইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, সড়ক সংস্কার কাজে এমন অনিয়ম কখনোই দেখিনি। প্রত্যেকটি কাজে ঠিকাদার তার মনের মত করে ফাঁকি যাচ্ছেন। সড়কে নেমে ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে সবাইকে কাজের ফাঁকি ও অনিয়ম প্রমাণসহ দেখিয়েছি। সিডিউল মোতাবেক কাজ করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে আমি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি।
সড়কের সংস্কার কাজের তদারকি কর্মকর্তা সরাইল উপজেলা এলজিইডির সার্ভেয়ার শফিকুর রহমান তার ওপর আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, এ কাজে কিছু সমস্যা আছে। যখন যে সমস্যা পেয়েছি কর্তৃপক্ষকে তা লিখিতভাবে অবহিত করেছি। একাধিকবার পত্র দিয়েছি।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হাসান এন্টারপ্রাইজের মালিক মোস্তাফিজুর রহমান জুয়েল বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, কাজের সিডিউল অনুযায়ী আমরা কাজ করে যাচ্ছি। রাস্তার প্রসস্ততা কমানোসহ অনিয়মের অভিযোগ সত্য নয়। ১২ ফুট রাস্তা ও ৩ ফুট ওয়াকওয়ে আমরা ঠিক রেখেই কাজ করছি। আর নিম্নমানের মালামাল ব্যবহারের প্রশ্নই আসে না।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শিরাজুল ইসলাম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, সরাইল-অরুয়াইল সড়কের কাজে কোনোপ্রকার অনিয়ম হচ্ছে না। চেয়ারম্যানসহ অনেকেই অভিযোগ করেছিলেন। যার কারণে আমরা সরেজমিনে গিয়ে দেখে আসি। কোনো প্রকার সমস্যা পাওয়া যায়নি। অনিয়মের অভিযোগগুলো সত্য নয়। কাজ ভালোভাবেই হচ্ছে।