একটি টাকা দাওনা, একটি টাকা দাওনা, একশো টাকা, পাঁচশো টাকা, হাজার টাকা চাইনা-এই গান গেয়ে মানুষের মন জয় করে পরিবারের জন্য রোজকার করেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রাজিব। পুরো নাম রাজিবুল ইসলাম। দুই মেয়ে রাজিয়া, কাফিয়া ও স্ত্রীকে নিয়ে তার বর্তমান পরিবার।
তানোর উপজেলার সিন্দুকায় গাইনপাড়া গ্রামে রাজিবের জন্ম। অত্যন্ত গরীব পরিবারে চার ভাইবোনের মধ্যে রাজিব ছিলেন তৃতীয়। জন্মের পরপরই টাইফয়েডজনিত কারণে সে অন্ধ হয়ে যায়। শুরু হয় তার জীবনযুদ্ধ। পড়াশোনায় অমনোযোগী স্বভাবের রাজীব ছোটবেলা থেকেই গানভক্ত ছিলো। সঙ্গে থাকত একটা ভাঙ্গাচোরা রেডিও। আর পথে প্রান্তরে তাল মিলিয়ে গুনগুন করে গান গাইতেন।
সম্প্রতি তার দেখা মেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা বাজারে। রাজিব বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে জানান, পরিবারের ছয়জন সদস্যদের পেট চালানো বাবা মায়ের পক্ষে কষ্টকর হওয়ায় ৮-১০ বছর বয়সেই আমাকে সংসারের হাল ধরতে হয়। জীবিকার শুরুর দিকে রেডিও নিয়ে বাসে মানুষকে গান শুনিয়ে অর্থ উপার্জন করতাম। কিন্তু বাসের টিকিট মাস্টাররা তা বেশিদিন চলতে দেননি।
এক ব্যক্তির সহযোগিতায় তানোর সদরের একটি স্কুলে ভর্তি করলেও বেশিদূর পড়াশোনা করতে পারেনি রাজিব। স্কুলে গান শিখতে গিয়ে তবলা ভেঙে ফেলার দায়ে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয় তাকে। সেদিনের পর আর কখনও স্কুলে যাওয়া কিংবা হারমোনিয়াম-তবলা বাজানো শেখা হয়ে উঠেনি। কিন্তু শেখার আগ্রহ থেমে ছিলোনা। তাই হাঁড়ি-পাতিল দিয়েই শুরু হয় রাজিবের বাদ্যযন্ত্র বাজানো। মাটির হাড়ি, কলসি ও বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙার পর রাজিব আবিষ্কার করেন টিনের কলসি। সেটাতেই সুর তুলে এখন গান ফেরি করে বেড়ান। রাস্তার অলিগলিতে বসেই শুরু করেন নিজের কথা ও সুরে বানানো গান। মুখ ও টিনের কলসির সাহায্যে ভিন্ন রকম শব্দ করে এলাকায় বেশ পরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি। বিভিন্ন বয়সী শিক্ষার্থী তাদের আড্ডা জমাতে কিংবা বিভিন্ন দোকান ও ভিড় ঠেলেই খুঁজে পাওয়া যায় রাজিবকে। ইউটিউবসহ বিভিন্ন ফেসবুক পেইজে রাজিব এক পরিচিত নাম। ভ্যানে চড়ে বিভিন্ন এলাকায় এভাবেই রাজিব ফেরি করে গান শুনাতেন।
কিন্তু একদিন সেই ভ্যান দুর্ঘটনায় বাম পা-টাও ভেঙে যায়। সেই থেকে রাজিবের ভ্যানে করে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে গান শোনানো আর হয়না। তবে থামেনি গানপাগল রাজিবের পথচলা। খুঁড়িয়ে পথচলেই তিনি এখন গান গেয়ে বেড়ান। আগে বিভিন্নস্থানে যেতে পারলেও বর্তমানে আর দূরে যেতে পারেন না।
রাজিবের স্বপ্ন সন্তান দুটিকে তিনি মানুষের মত মানুষ করবেন। বড় মেয়ে রাজিয়া ৩য় শ্রেণিতে ও ছোট মেয়ে কাফিয়া একটি স্থানীয় এতিমখানায় হাফিজিয়া পড়ছে।
রাজিব আরও বলেন, সংসারে একটু সচ্ছলতা ফেরাতে প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য ছুটে গিয়েছিলাম স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কাছে। কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধি তাকে ভাতার কার্ড পাইয়ে দিতে ৬ হাজার টাকা দাবি করে, সে টাকা দিতে না পারায় আর প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়া হয়নি।