হুমায়ূন বিহীন ভালো নেই শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ

নেত্রকোনা, দেশের খবর

জিয়াউর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, নেত্রকোনা | 2023-08-31 21:18:16

নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ তাঁর মা আয়েশা ফয়েজের কথামতো নিজগ্রাম নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার প্রত্যন্ত পল্লী কুতুবপুর গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। 

১৯৯৬ সালে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর বিদ্যালয়টির ভিত্তি প্রস্থর স্থাপনের পর মেহের আফরোজ শাওনের করা নকশা অনুযায়ী ২০০০ সালে ভবন নির্মাণ শেষে ২০০৬ সালে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করা হয়।

স্কুলের মাঠে অবস্থিত শহীদ মিনার 

 

প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল হুমায়ূন আহমেদের। তিনি চেয়েছিলেন তাঁর এ প্রতিষ্ঠানটি দেশসেরা একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিয়মিতভাবে হুমায়ূন আহমেদ নিজে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে এসে তাদের খোঁজ-খবর নিতেন এবং বিদ্যালয়টি নিয়ে তাঁর স্বপ্নের কথা তাদের কাছে বর্ণনা করে শোনাতেন।

প্রতিষ্ঠানকে সফলতার শীর্ষে নিয়ে যেতে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা 

 

২০১২ সালে হুমায়ূন আহমেদের প্রয়াণের পর অনেকটা হোঁচট খায় এ প্রতিষ্ঠানটি। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন বিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ এলাকাবাসী। তবে হুমায়ূনপত্মী মেহের আফরোজ শাওন স্বামীর অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করছেন। হাল ছাড়েননি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তারা হুমায়ূন আহমেদের স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানকে সফলতার শীর্ষে নিয়ে যেতে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলেন, '২০১৯ সালে বিদ্যালয়টির অভিভাবক হুমায়ূন আহমেদকে ছাড়া সাত বছর পার করেছে। বিদ্যালয়টির প্রতিটি স্থাপনার সাথে জড়িয়ে রয়েছে হুমায়ূন আহমেদের নানা রকম স্মৃতি। সেই সব স্মৃতিকে পাথেয় করেই সফলার পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া বিদ্যালয় মাঠের এক পাশে রয়েছে শহীদ স্মৃতি ফলক। যা কবি শামসুর রাহমান উদ্বোধন করেন।'

এক যুগেরও বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ায় বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে

 

শহীদ ফয়জুর রহমান সড়ক ঘেঁষে অবস্থিত বিদ্যালয়টিতে রয়েছে বিশাল মাঠ। কিন্তু মাটি ভরাট না করায় পানি জমে থাকে। বিদ্যালয়টিতে হুমায়ূন আহমেদের পিতা শহীদ ফয়জুর রহমান আহমেদের নামে একটি বিশাল পাঠাগার, কম্পিউটার ল্যাব ও বিজ্ঞানাগার রয়েছে। কম্পিউটার ল্যাবে থাকা ১২টি কম্পিউটারের মধ্যে ৮টি কম্পিউটারই অকেজো রয়েছে বলে জানান বিদ্যালয়টির আইসিটি শিক্ষক।

হুমায়ূন আহমেদের প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ বিদ্যালয় 

 

প্রথমে মাত্র ৪০ শিক্ষার্থী নিয়ে বিদ্যালয়টি যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ছাত্রছাত্রী রয়েছে ৩৬৭ জন। এদের মধ্যে ছাত্র ২২০ জন ও ছাত্রী সংখ্যা রয়েছে ১৪৭ জন। পাঠদান কার্যক্রমের জন্য শিক্ষক রয়েছেন ১৫ জন এবং কর্মচারী রয়েছেন ৩ জন।

প্রতি বছরই জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় এ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীরা শতভাগ সফলতা অর্জনসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জিপিএ-৫ লাভ করে আসছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় সত্তর ভাগ ছাত্রছাত্রীই দূর-দূরান্ত থেকে বাইসাইকেলে করে প্রতিদিন বিদ্যালয়টিতে যাতায়াত করে বলেও জানান স্কুল কর্তৃপক্ষ। তবে এলাকার অধিকাংশ রাস্তা যাতায়াতের অনুপযোগী হওয়ায় শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

ভেঙে গেছে শ্রেণিকক্ষের জানালার কাচ

 

এছাড়া এক যুগেরও বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ায় বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ভেঙে গেছে শ্রেণিকক্ষের জানালার কাচ। যে কারণে বৃষ্টি এলেই শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে পারে না। পানি ঢুকে শিক্ষার্থীদের বই, খাতাসহ তাদের জামা কাপড় ভিজে নষ্ট হয়ে যায়।

বিদ্যালয়টির সহকারী প্রধান শিক্ষক শরীফ আনিস রহমান বলেন, 'অচিরেই বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত করা হবে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে আশ্বাসের বাণী শোনা গেলেও আজও তা হয়নি। এ অবস্থায় শিক্ষকরা মানবেতর জীবন যাপন করেন।'

শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ এলাকাবাসীর দাবি, সরকার যেন হুমায়ূন আহমেদের স্বপ্নের এ প্রতিষ্ঠানটির দিকে সুনজর দেন এবং বিদ্যালয়টিকে এমপিওভুক্তির আওতায় নিয়ে আসেন।

 

 

শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান বলেন, 'শত প্রতিকূলতা স্বত্বেও শিক্ষকদের নিরলস চেষ্টার ফলে শিক্ষার্থীরা শতভাগ সফলতা অর্জন করে আসছে। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটি  সেরা প্রতিষ্ঠান হওয়ার সম্মানও লাভ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির বয়স এক যুগ পেরিয়ে গেছে।'

এদিকে এমপিওভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষকরা পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে রয়েছেন। সম্প্রতি স্থানীয় সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিল বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে এমপিওভুক্তির বিষয়ে শিক্ষকদের আশ্বস্ত করেছেন বলে জানান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। 

এ সম্পর্কিত আরও খবর