ত্রাণের টাকায় তিস্তায় বাঁধ দিন

লালমনিরহাট, দেশের খবর

নিয়াজ আহমেদ সিপন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, লালমনিরহাট | 2023-09-01 15:02:59

প্রতি বছর বন্যা আর ভাঙনের কবলে পড়ে দেশের ক্ষতি হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। বর্ষা এলে জিও ব্যাগ বা বালুর বস্তা ফেলে সরকারি শত কোটি টাকা অপচয় হচ্ছে। মেরামতের নামে অর্থ খরচ করে ছোট ছোট যেসব বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে, তা কয়েক দিনের স্রোতে বিলীন হচ্ছে।

তিস্তাপাড়ের মানুষ চান, সরকার যেন ত্রাণের টাকা দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করে দেয়। তিস্তা নদী খনন করে স্থানীয় বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে চিরস্থায়ী বসবাসের নিশ্চয়তা চান তারা।

তিস্তার রুদ্র মূর্তি দেখছেন স্থানীয় জনগণ, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

 

এ ছাড়া বন্যা, ভাঙনের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার নামে কোটি টাকার ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু এত বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয় করেও তিস্তাপাড়ের মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হচ্ছে না। তাই ত্রাণ না দিয়ে সেই টাকা দিয়ে নদী খনন করে দুই তীরে বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ চান তিস্তাপাড়ের মানুষ।

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা চন্ডিমারী গ্রামের আব্দুল মজিদ বলেন, ‘ভাঙন শুরু হলে বোমা মেশিনে বালু তুলে প্রতিবছর বাঁধ বা বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন রোধের ব্যর্থ চেষ্টা করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বোমা মেশিনে বালু তোলায় পরই ভেঙে যাচ্ছে এ বাঁধ। ১০টি বালুর বস্তা ফেলে ৫০ বস্তার ভাউচার জমা দিয়ে কোটি টাকা লোপাট করছেন তারা। কিন্তু কোনো কাজে আসছে না।’

ভাঙনের কারণে অন্যত্র বাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন অনেকে, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

 

একই কথা এন্তাজ আলীর। তিনি বলেন, ‘পানি প্রবাহের পথ না থাকায় তিস্তা প্রতিবছর বসতভিটা, ফসলি জমি, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। ভোটের সময় নেতারা নদী খননের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট নেন। এমপি-মন্ত্রী হয়ে আর এলাকায় আসেন না। তাই তিস্তার স্থায়ী সমাধানে আমাদের দীর্ঘ দিনের দাবি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে না। ফলে আমাদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটে না। এ জন্য তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।’

তিস্তার রুদ্র মূর্তি দেখছেন স্থানীয় জনগণ, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

 

গত কয়েক দিন তিস্তার পানি প্রবাহ বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহের পর কমে যায়। ফলে তিস্তার পাড়ে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। গত কয়েক দিনে প্রায় অর্ধ শতাধিক বাড়ি তিস্তায় বিলীন হয়েছে। তিস্তার কড়াল গ্রাসে ভেসে গেছে কয়েকটি বাঁধ ও রাস্তা ঘাট। ভেসে গেছে শত শত পুকুরের মাছ। মাঠের ফসল নষ্ট হওয়ায় স্বপ্ন ভেঙে গেছে চাষিদের। এভাবে প্রতিবছর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে লালমনিরহাটের তিস্তাপাড়ের হাজারো পরিবার। কোনো কোনো পরিবার ২০/২৫ বার বাড়ি সরিয়ে নিয়েছে। এভাবে তিস্তার ভাঙনে নিঃস্ব হচ্ছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ।

এদিকে বন্যা ও ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শনে এসে পানিসম্পদ সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেছেন, ‘তিস্তাপাড়ের মানুষের দুঃখ লাঘবে শিগগিরই তিস্তা নদী খনন করে উভয় তীরে বাঁধ নির্মাণ করা হবে।’

চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এ কাজ শুরু করা হবে বলেও জানান তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর