সরকার সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও দক্ষ জনবল ও কর্মকর্তাদের দ্বায়িত্বহীনতার কারণে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার সুফল পাচ্ছে না। এর বাস্তব চিত্রের দেখা মিলেছে হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার ১নং ইউনিয়নের উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী একটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্বাস্থ্য বিভাগের একজন মেডিকেল অফিসার, একজন সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন ফার্মাসিস্ট, একজন এমএলএসএস এবং পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের একজন এফডব্লিউভি ও একজন আয়ার দায়িত্ব পালন করার কথা।
অথচ লাখাই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাগজে কলমে কর্মরত রয়েছেন মাত্র একজন মেডিকেল অফিসার। তাও গত দুই বছর যাবৎ কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন তিনি। ফলে স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন ওই ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, লাখাই উপ-স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত রয়েছেন ডা. নাহিদ চৌধুরী সুমন। কিন্তু ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে দুই বছর ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন তিনি। তার স্থলে সপ্তাহে দুইদিন রোগী দেখেন লাখাই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অ্যাসিস্ট্যান্ট মেডিকেল অফিসার অমল চন্দ্র মোদক।
তিনি জানান, বামৈ ইউনিয়নের উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত আছেন তিনি। বর্তমানে উপজেলার দুইটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একমাত্র চিকিৎসক তিনি। যার কারণে লাখাই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সপ্তাহে দুই দিনের বেশি রোগী দেখা সম্ভব হয় না।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সপ্তাহে ১-২ দিন স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি খোলা হয়। তাছাড়া যিনি সপ্তাহে ১-২ দিন রোগী দেখেন তিনিও ১-২ ঘণ্টা বসে চলে যান। যার ফলে তিনি কখন আসছেন বা চলে যান তা তারা (স্থানীয়রা) জানেন না। আবার সেখান থেকে ঠিকমতো ওষুধও পাওয়া যায় না।
এ ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দা জুয়েল মিয়া অভিযোগ করে বলেন, ‘ঠিকমতো ওষুধ বা জরুরি স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া থেকে গত দুই বছর ধরে আমরা বঞ্চিত রয়েছি। সপ্তাহে ১-২ দিন এখানে একজন ডাক্তার আসেন। কিন্তু ১-২ ঘণ্টা বসে চলে যান।’
উৎপল দাস নামে একজন জানান, এখানে একটি সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র আছে তা অনেকেই জানেন না। অনেকে মনে করেন এটা কোনো পরিত্যক্ত ভবন।
তিনি আরও জানান, বর্ষা মৌসুমে নানা রকম পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এ এলাকার লোকজন। কিন্তু সঠিক চিকিৎসা তারা পাচ্ছে না। আবার অনেকের টাকা দিয়ে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই।
লাখাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মাসুম জানান, লাখাই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে লোকবলের অভাবে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। সরকারিভাবে কম জনবল নিয়োগসহ নানা প্রতিকূলতার কারণে এমনটা হচ্ছে।
ডা. নাহিদ চৌধুরী সুমনের কর্মস্থলে না যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন যাবৎ কর্মস্থলে আসেন না তিনি। বিষয়টি আমাদের জানা আছে। এ ব্যাপারে তাকে একাধিক কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। শিগগিরই কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’
তিনি আরও জানান, অচিরেই এই পদটি শূন্য ঘোষণা করে নতুন নিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে।
এ ব্যাপারে জানতে ডা. নাহিদ চৌধুরী সুমনের সঙ্গে মোবাইলে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।