ময়মনসিংহের গৌরীপুরের শ্যামগঞ্জে খাদ্যগুদামে কৃষকের কাছে থেকে ধান ক্রয় না করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রভাবশালীদের ধান ক্রয় করছে গুদাম কর্তৃপক্ষ। এতে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকেরা।
রোববার (২১ জুলাই) দুপুরে ধান ক্রয় না করায় খাদ্যগুদাম কর্মকর্তাদের সঙ্গে কৃষকের বাকবিতণ্ডা হয়। পরে গুদাম কর্তৃপক্ষ গুদামের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
কৃষকরা জানান, গুদামের অফিস সহকারী মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে গড়ে উঠা সিন্ডিকেটকে টাকা দিয়ে প্রভাবশালীরা রাতের বেলা ট্রাক বোঝাই ধান এনে গুদামে বিক্রি করছে। কিন্তু আমাদের ধান গুদামে পড়ে থাকলেও ক্রয় হচ্ছেনা।
গুদামের অফিস সহকারী মাহমুদুল হাসান বলেন, 'কৃষকদের ধান রাতে বাইরে থাকলে বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হতে পারে। এজন্য রাতের বেলা ধান গুদামে ঢোকানো হয়েছে। আর আমাদের কোনো সিন্ডিকেট নেই।'
খাদ্যগুদাম সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলার সিধলা ও মইলাকান্দা ইউনিয়নের কৃষকের জন্য শ্যামগঞ্জ খাদ্যগুদামে ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২৯২ মেট্রিক টন। প্রতি মণ ধানের সরকারি মূল্য ১ হাজার ৪০টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, শ্যামগঞ্জ খাদ্যগুদামের গেটে তালা দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের ধান নিয়ে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছেনা। সাংবাদিকের উপস্থিতিতে গেট খোলা হলে বিক্ষুব্ধ কৃষকরা ভেতরে ঢুকে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা সাইদুর রহমান ও শ্যামগঞ্জ খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা প্রদীপ রিছিলের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।
গুদাম ও গুদামের বাইরে ঘুরে দেখা যায়, কৃষকের সারি সারি ধানের বস্তা পড়ে থাকলেও ক্রয় হচ্ছে না। পাওয়া যায়নি কার্ডধারী প্রকৃত কৃষকের তালিকা। ময়েশ্চার মেশিন না থাকায় ধানের গুণগত মান পরীক্ষা না করেই তড়িঘড়ি করে ক্রয় হচ্ছে প্রভাবশালীদের ধান।
গুদামের লেবার সর্দার আব্দুল গফুর বলেন, 'স্থানীয় নেতারা গুদামে ধান বিক্রি করায় কৃষকরা ধান বিক্রি করতে পারছে না। তাই কৃষকরা গুদামের লোকজনের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ছেন।'
মইলাকান্দা ইউনিয়নের কৃষক আজিজুল হক বলেন, 'গুদাম সিন্ডিকেটকে টাকা না দেয়ায় আমার ধান নেয়া হয়নি। দুই তিন ধরে ধান বিক্রি করতে পারিনি।'
শ্যামগঞ্জ খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা প্রদীপ রিছিল বলেন, 'গুদামের ময়েশ্চার মেশিন নষ্ট। যে সকল কৃষকের ধান গুদামে ঢুকানো হয়েছে তাদের ধান অন্য উপজেলা থেকে বরাদ্দ এনে ক্রয় করা হবে। যদি গুদামের কেউ টাকা চায়, আমাকে জানালে আমি ব্যবস্থা নিবো।'
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা বলেন, 'কৃষকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। কোনো অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কার্ডধারী কৃষকদের তালিকা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন তালিকা সাথে নেই। তবে দুই ইউনিয়নে চার হাজারের মতো হতে পারে।'