২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৭ বছরে ৯ বার হামলা হয়েছে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাঁড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নজরুল ইসলামের পরিবারের ওপর। ৭ বছরে এই পরিবারের ৩ জনকে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর সন্ত্রাসী বোমা হামলা চালিয়ে হত্যা করেছিল নজরুল ইসলামের ভাই সিরাজুল ইসলামকে। এরপর ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করেছিল নজরুল ইসলামের ভাইপো সিরাজুল ইসলামের ছেলে রাসেল কবিরকে।
সর্বশেষ নজরুল ইসলামকে (৪৮) গুলি করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। সোমবার (২২ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে শহরতলীর কাশেমপুর হাজামপাড়া নামকস্থান থেকে পুলিশ নজরুলের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে।
নিহত নজরুল ইসলাম আগরদাঁড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি ও আগরদাড়ি ইউনিয়নের কুঁচপুকুর গ্রামে মৃত নেছার উদ্দিনের ছেলে। আওয়ামী লীগ নেতা নিহত হওয়ার খবর পেয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনছুর আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
আগরদাঁড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান হবি জানান, নিহত নজরুল ইসলাম কদমতলা থেকে বাজার করে মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে কাসেমপুর স্টোন ব্রিকস্ এলাকায় পৌঁছালে পিছন দিক থেকে দুর্বৃত্তরা গুলি করে পালিয়ে যায়। এ সময় তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে।
সাতক্ষীরার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার ইলতুৎমিস জানান, নিহত আওয়ামী লীগ নেতার মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। হত্যাকারীদের ধরতে পুলিশ মাঠে নেমেছে। তবে কি কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে সে সম্পর্কে তিনি কিছুই বলতে পারেননি।
নিহত নজরুল ইসলামের ছেলে পলাশ হোসেন জানান, স্থানীয় সাবেক মেম্বর তৌহিদুলের সঙ্গে তার বাবার বিরোধ চলছিল। এই বিরোধের জের ধরে তার বাবাকে তৌহিদ মেম্বরের লোকজন হত্যা করতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন।
উল্লেখ্য ২০১৩ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত এ পরিবারের উপর নয়বার সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। সে হামলায় তার ভাই সিরাজুল ইসলাম ও ভাইপো যুবলীগ নেতা রাসেল নিহত হন। নজরুল নিজের নিরাপত্তার জন্য সে সময় তিনি সদর থানায় রাত্রি যাপন করতেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম জানান, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে চলমান সংঘাতের মধ্যে সাতক্ষীরায় আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলামের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তার ভাই সিরাজুল ইসলাম (৫৩) কে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়। ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর রাতের এই হামলার জন্য জামায়াতে ইসলামীকে দায়ী করেছিলেন আগরদাঁড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম। ওই হামলার সময় নজরুল বাড়িতে ছিলেন না। তাকে না পেয়ে তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম সরদারকে (৫৩) হত্যা করা হয়। ওই হামলায় আহত কওছার আলী একই গ্রামের আফতাব সরদারের ছেলে। তিনি নজরুল ও সিরাজুলের ভগ্নিপতি।
এ দিকে সাতক্ষীরা সদর থানা সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল রাতে সিরাজুল ইসলামের ছেলে যুবলীগ নেতা রাসেল কবিরকে সাতক্ষীরা রাজারবাগান এলাকায় গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।
সাতক্ষীরায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে যুবলীগ নেতা নিহতের ঘটনায় সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়। মামলায় ১৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়। ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল বেলা ১১ টার দিকে নিহতের মা আমেনা খাতুন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। পুলিশ রাসেল কবির হত্যার ঘটনায় সদর উপজেলার দক্ষিণ চুপড়িয়া গ্রামের মাহফুজুর রহমানের ছেলে ইয়াকুব আলী (৫৯), একই উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের দিলদার রহমানের ছেলে ইকবাল হোসেন (৪০) ও নারায়ণজোল গ্রামের বাবর আলীর ছেলে ইমাম হোসেনসহ (৩০) ৫ জনকে গ্রেফতার করেছিল।