সন্তান তাসলিমা তুবাকে স্কুলে ভর্তি করানোর বিষয়ে খোঁজ নিতে বের হয়েছিলেন মা তাসলিমা বেগম রেনু (৪০)। বের হয়ে আর প্রাণ নিয়ে আর ঘরে ফেরা হল না। চার বছরের মেয়েটিকে নিয়ে তার ছিল অনেক স্বপ্ন। সে স্বপ্নগুলো গণপিটুনিতে হারিয়ে গেছে। তবে শিশুটি জানত ড্রেস নিয়ে ঘরে ফিরবে তার মা। কিন্তু মায়ের মরদেহের সঙ্গে তুবার সঙ্গী হিসেবে ঘরে এল কান্না।
ফুটফুটে মেয়েটির ভবিষ্যতে কি হবে? মা হারা শিশুটি কীভাবে থাকবে। মাকে ছাড়া এই ছোট শিশুটিকে কীভাবে লালন পালন করবে এ নিয়ে হতাশায় রয়েছে আত্মীয়-স্বজন। রেনু হত্যাকারীদের বিচার চেয়েছেন স্বজনরা।
জানা গেছে, মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করাবে বলে গত একবছর ধরে বাংলা বর্ণমালা শিখিয়েছেন রেনু। আর সেজন্য শনিবার (২০ জুলাই) সকালে স্কুলে ভর্তির বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে গণপিটুনিতে মারা গেছেন তিনি। ঢাকার উত্তর পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ ঘটনা ঘটে। মাকে হারিয়ে তাসলিমা তুবা এখন খালাদের সঙ্গে রয়েছে।
এদিকে রোববার (২১ জুলাই) বিকেলে রেনুর মরদেহ লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উত্তর সোনাপুর গ্রামে বাবার বাড়িতে আনা হলে আত্মীয় স্বজনের কান্নায় এলাকায় শোকের মাতম সৃষ্টি হয়। দাফন পর্যন্ত স্থানীয় মানুষের ভিড় ছিল ওই বাড়িতে। রাতে পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে রেনুর মরদেহ দাফন করা হয়েছে। তার জানাজায় আত্মীয়-স্বজনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নেয়।
অন্যদিকে নিহতের বোনের ছেলে নাসির উদ্দিন টিটু ঢাকার বাড্ডা থানায় ৪০০ থেকে ৫০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
নিহতের বোনের মেয়ে নুরজাহান বেগম মুন্নি বলেন, 'গত দুইদিন মাকে না দেখে তুবা শুধু কান্না করছে। সে শুধু বলে, তার মা নেই। মা কোথায় গেছে, বারবার এটাই জানতে চায় তুবা। তাকে এখন আমাদের কাছেই রাখা হয়েছে।'
নিহতের বোনের ছেলে নাসির উদ্দিন টিটু বলেন, 'ছেলে ধরা সন্দেহে আমার খালাকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমি এ ঘটনায় বাড্ডা থানায় মামলা করেছি। আমরা হত্যাকারীদের বিচার চাই।'
প্রসঙ্গত, পারিবারিক কলহের কারণে প্রায় দুই বছর আগে স্বামী তসলিম হোসেনের সঙ্গে রেনুর ডিভোর্স হয়। তুবা ছাড়াও তাদের সংসারে তাসফিক আল মাহি (১১) নামে এক ছেলে সন্তান রয়েছে। বিচ্ছেদের পর ছেলে বাবার সঙ্গে থাকে। আর মেয়ে মায়ের সঙ্গে ছিল। রেনু মহাখালীতে বাসা ভাড়া করে থাকতেন। রেনুর এক ভাই ও পাঁচ বোন। মাস্টার্স শেষ করা রেনু সবার ছোট। পড়ালেখা শেষে তিনি ঢাকায় আড়ং ও ব্র্যাকে চাকরি করেছিলেন। দুই বছর ধরে ছাত্র-ছাত্রীদের তিনি প্রাইভেট পড়িয়ে আসছেন।