চাঁদপুরে এ বছর আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো দাম পাওয়ার কারণে কৃষকদের মুখেও হাসি ফুটেছে। জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আখের ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে আখের খুচরা ও পাইকারি বিক্রি। আগামী ১ মাসের মধ্যে অধিকাংশ জমির আখ বিক্রি হয়ে যাবে। এসব জমিতেই আবাদ হবে বোরো ধান। চাঁদপুরে এই গ্যান্ডারি নামক আখ এখন স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হচ্ছে।
চাঁদপুর জেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৮ উপজেলার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৬৭৫ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৬৭০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ফরিদগঞ্জ উপজেলায় আবাদ হয়েছে ৩৩৫ হেক্টর, মতলব উত্তর উপজেলায় ২১০ হেক্টর। মতলব উত্তর ও ফরিদগঞ্জ উপজেলা সেচ প্রকল্পের আওতায় হওয়ার কারণে জমিগুলো কৃষি উপযোগী থাকে বছরজুড়ে।
এছাড়াও সদর উপজেলায় আবাদ হয়েছে ৬৫ হেক্টর, মতলবের দক্ষিণে ৫ হেক্টর, হাজীগঞ্জ উপজেলায় ৮ হেক্টর, শাহরাস্তিতে ৩৫ হেক্টর, কচুয়ায় ৫ হেক্টর ও হাইমচর উপজেলায় ৭ হেক্টর।
ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর ও বালিথুবা ইউনিয়নে গিয়ে প্রায় জমিতে আখের আবাদ দেখা গেছে। কৃষকরা জমিতে আখ তুলছেন, কেউ আটি বাঁধছেন। তারপর অন্য শ্রমিক এসব আখ সড়কে নিয়ে স্তূপ করে রাখছেন।
ফরিদগঞ্জ বালিথুবা মদনের গাঁও গ্রামের কৃষক মুখলেছুর রহমান বলেন, 'তিনি এ বছর ৪০ শতাংশ জমিতে আখের আবাদ করেছেন। খরচ বাদ দিয়ে তার কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা লাভ হবে।'
লোহাগড়র গ্রামের কৃষক জুয়েল পাটওয়ারী ও সুমন খাঁন বলেন, 'তারা প্রায় ১৫ বছর ধরে আখের আবাদ করেন। সেচ প্রকল্প হওয়ার কারণে তাদের আখে ফলন খুবই ভাল হয়েছে। এ বছর তাদের জমিতে ২০৮ নম্বর অর্থাৎ যা 'চাঁদপুর গ্যান্ডারি' নামে পরিচিত এটিই তারা আবাদ করেছেন। চাঁদপুর গ্যান্ডারি খুচরা এবং পাইকারি দুইভাবেই বিক্রি হচ্ছে।'
মদনের গাঁও গ্রামের আরেক কৃষক বাবুল গাজী বলেন, 'আমাদের এলাকায় মাত্র আখ বিক্রি শুরু হয়েছে। আগামী ১ মাসের মধ্যে সব আখ বিক্রি হয়ে যাবে। তবে কিছু উঁচু জমির আখ দেরিতে বিক্রি হয় এবং ওইসব কৃষক দামও ভাল পান।'
আখের পাইকারি ব্যবসায়ী রমজান আলী মিজি বলেন, 'এ বছর আখের ফলন খুবই ভাল হয়েছে। এই এলাকায় চাঁদপুর গ্যান্ডারি, রং বিলাস, ইশরদি বিএসআরআই-(৩৪), ৪১ ও ৪২ আবাদ হয়। স্থানীয় জাতের আখের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি। আমি এইসব আখ ক্রয় করে ঢাকা এবং নোয়াখালীতে নিয়ে বিক্রি করি।'
চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা নোয়াখেরুল ইসলাম বলেন, 'প্রাকৃতিক পরিবেশ ভাল থাকায় চাঁদপুরে আখের আবাদ খুবই ভাল হয়েছে। লাভজনক হওয়ার কারণে কৃষকদেরও আখ আবাদের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে।'