বন্যাকবলিত এলাকার পশুর দাম কম, লোকসানের আশঙ্কা

নাটোর, দেশের খবর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, নাটোর | 2023-09-01 00:20:14

ঈদুল আযহার বাকি আর দুই সপ্তাহ। এই ঈদে স্বচ্ছল মুসলিমরা পশু কোরবানি দেন। ফলে সারাদেশে পশুর চাহিদা বেড়ে যায়। ইতোমধ্যে জমে উঠতে শুরু করেছে নাটোরের কোরবানির পশুর হাট। কিন্তু নাটোরের হাটগুলোতে বন্যাকবলিত এলাকা থেকে আসা পশুর দাম কম হওয়ায় লোকসানের আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, বিভিন্ন অঞ্চলের খামারে পশু পালন হওয়ায় বাজারে পশুর সরবরাহ এমনিতেই বেশি। ৩০ হাজার টাকা থেকে ৩ লাখ টাকায় গরু মিলছে বাজারগুলোতে। তবে বন্যাকবলিত এলাকা থেকে আসা পশুর দাম কম হওয়ায় ক্রেতারা সেগুলোর প্রতি ঝুঁকছেন।

জেলার সিংড়া উপজেলার অর্ধশতাধিক স্থানে কোরবানি উপলক্ষে অস্থায়ী হাট বসলেও সিংড়া পৌরসভার ফেরিঘাটের হাটটি অন্যতম। স্থানীয়ভাবে পালিত গরুর পাশাপাশি বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ থেকে আনা হচ্ছে গরু। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কোরবানির মৌসুমে গরুর সরবরাহ বেড়েছে। তবে এবার গরুর সংখ্যা বিগত বছরের তুলনায় বেশি।

ব্যবসায়ীদের মতে, চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়াজুড়ে সারাবছর পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক গো-খাদ্যের সরবরাহ থাকায় এখানে গরু পালন বেশি হয়। স্থানীয়ভাবে পালিত গরুই কোরবানির সময় সিংড়াসহ আশেপাশের জেলাগুলোতে বিক্রি করা হয়। তবে এবার কোরবানির প্রথম হাটেই এখানে এসেছে বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের গরু। দুইটি জেলাই বন্যাকবলিত হওয়ায় প্রত্যন্ত এলাকার খামারিরা কম দামে গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন। পর্যাপ্ত গো-খাদ্য না থাকায় কোরবানিতে বিক্রির টার্গেট করা পশু ছাড়াও অন্য পশুগুলোও বিক্রি করছেন তারা।

সোমবার বগুড়ার সোনাতলার খামারি আফাজ শেখ একটি গরু নিয়ে ফেরিঘাট পশুর হাটে এসেছিলেন। তিনি জানান, বাড়িঘর বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় কম দামে গরু বিক্রি করতে নাটোরে এসেছেন।

একইদিন সারিয়াকান্দির রৌহদহ গ্রামের জালাল উদ্দিন বিক্রির জন্য তিনটি গরু এনেছিলেন হাটে। তিনি জানান, বন্যার পানিতে গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। পর্যাপ্ত খাদ্য না পেয়ে গরুগুলো দুর্বল হয়ে পড়ছে। সবকিছু ভেবে গরু বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

সিরাজগঞ্জের কালিয়াকান্দপাড়ার খামারি ফজলে রাব্বী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'সিরাজগঞ্জে গরুর দাম নেই। একটু বেশি দাম পাওয়ার আশায়ে নাটোরের হাটে এসেছি।'

এনায়েতপুরের হাশেম মৃধা বলেন, 'বন্যায় বাড়িতে পানি উঠেছে। নিজেদের থাকারই জায়গা নাই। গরু রাখবো কোথায়? তাই বিক্রি করতে এসেছি।'

সিংড়ার হাতিয়ান্দহ গ্রামের খামারি শোয়েব আলী বলেন, 'আমরা কোরবানি ঈদকে টার্গেট করে সারা বছর গরু মোটাতাজা করি। এমনিতেও সেই গরু বিক্রির সময় দাম কমে যায়। তার ওপর বাইরের পশু কম দামে বিক্রি হলে লোকসান গুনতে হবে।'

চৌগ্রাম এলাকার হাবিবুল ইসলাম বলেন, 'হাট কর্তৃপক্ষ বেশি খাজনা আদায়ের জন্য বাইরের গরু হাটে তোলার অনুমতি দিচ্ছে। ফলে আমরা গরু বিক্রি করতে গিয়ে কম দাম পাচ্ছি। এক জেলার গরু আরেক জেলায় বিক্রি বন্ধ না হলে দাম পাওয়া যাবে না। ফলে গরু পালনে নিরুৎসাহিত হবেন খামারিরা।’

এদিকে, হাটে নির্বিঘ্নে কেনাকাটায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। ফেরিঘাট হাটসহ অন্যান্য হাটে নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

সিংড়া পৌরসভার মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘সিংড়ার গরুর হাটে কোনও চাঁদাবাজি বা ব্যবসায়ীদের দালালের খপ্পরে পড়ার সুযোগ নেই। ক্রেতারা নির্বিঘ্নে পশু ক্রয়-বিক্রয় করছেন।’

জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা বেলাল হোসেন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'বন্যাদুর্গত এলাকার পশু বাদেও নাটোরে পশুর চাহিদা মেটানোর জন্য স্থানীয় পশুই যথেষ্ট। তবে যেকোনো কারণে বাজারে পশুর সরবরাহ বাড়লে দাম স্বাভাবিকভাবেই কমে যায়।’

নাটোরের বিদায়ী পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘পশুর হাটগুলোর নিরাপত্তার দায়িত্বে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ রয়েছে। জাল টাকা শনাক্তকরণ মেশিনসহ প্রতিটি হাটে নিরাপত্তা সরঞ্জাম পাঠানো হচ্ছে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর