মাথাভাঙ্গা ব্রিজে ভারী যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা, যাত্রীদের দুর্ভোগ

চুয়াডাঙ্গা, দেশের খবর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, চুয়াডাঙ্গা | 2023-08-14 05:48:49

চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরের একমাত্র সংযোগ সড়ক মাথাভাঙ্গা ব্রিজে ভারী যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এই রুটে চলাচলকারী যাত্রীদের। ব্রিজটিতে দ্বিতীয়বারের মতো ফাটল দেখা দেওয়ায় গত ১১ জুন এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগ।

জানা গেছে, ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় যাতে বড় যানবাহন চলাচল করতে না পারে সে জন্য দুই পাশের মাঝ বরাবর পিলার বসানো হয়েছে। এতে ওই ব্রিজ দিয়ে কোনো বড় যান চলাচল করতে পারে না। ব্রিজটি বন্ধ থাকায় বিকল্প পথ হিসেবে দামুড়হুদা উপজেলার একটি ভাঙা ব্রিজ ও আলমডাঙ্গা উপজেলার হাটবোয়ালীয়া ব্রিজ ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে লোকসানের মুখে পড়ছেন পরিবহন মালিকরা।

চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্যপরিষদের অভিযোগ, ব্রিজ মেরামতের কাজ ধীরে চলছে। কয়েকবার ব্রিজটি খুলে দেওয়ার আল্টিমেটাম দেওয়া হলেও কাজে গতি আসেনি। বর্তমানে ব্রিজের ওপর দিয়ে ছোট যানবাহন চলাচল করছে। সংযোগ সড়ক না থাকায় দূরপাল্লার গাড়ি ব্রিজ পর্যন্ত আসছে। তবে কিছু গাড়ি দামুড়হুদা আথবা আলমডাঙ্গা ব্রিজ দিয়ে চলাচল করছে। এতে সমস্যায় পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। কারণ চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরের ২৫ মিনিটের পথ যেতে এখন দুই ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে।

জেলার সড়ক ও জনপথ বিভাগের তথ্যানুসারে, ১৯৫৮ সালে নির্মাণ করা হয় চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরের একমাত্র সংযোগ মাথাভাঙ্গা ব্রিজ। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনী ব্রিজটি বোমা মেরে ভেঙে দেয়। এতে নড়বড়ে হয়ে পড়ে ব্রিজটি। পরবর্তীতে ভাঙা ব্রিজ মেরামত করে ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হয়। দীর্ঘ সময় ব্যবহারের পর ব্রিজটিতে প্রথম ফাটল দেখা দেয় ৪ বছর আগে। সে সময় সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে ব্রিজের ওপর লোহার পাত বসিয়ে মেরামত করা হলেও চলতি বছরের ১১ জুন আবারও বড় আকারে ফাটল দেখা দেয়। এতে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে ব্রিজটি।

যাত্রীদের অভিযোগ, ব্রিজটি কয়েকদফা মেরামত করা হলেও এখন তা ব্যবহার উপযোগী নয়। নতুন ব্রিজ হওয়ার কথা থাকলেও গত দুই বছরে কোনও অগ্রগতি দেখছেন না তারা।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘ব্রিজের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। এর ওপর দিয়ে ভারি যান চললে কেঁপে ওঠে। দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষ এই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। কিন্তু সড়ক বিভাগ দেখেও না দেখার ভান করছে। ফলে শিগগিরই এখানে নতুন একটি ব্রিজ নির্মাণ করা প্রয়োজন।’

জেলা লোকমর্চার সভাপতি আলমঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘১০ টন ধারণ ক্ষমতা থাকলেও ব্রিজের ওপর দিয়ে মালামাল নিয়ে চলেছে ৪০ টনের ট্রাক। দশ চাকার এসব ট্রাক চলাচলে ব্রিজটি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফাটল দেখা দেয়ার পরপরই চরম ভোগান্তিতে পড়ছে দুই জেলার কয়েক লাখ। প্রতিদিনই তাদের এই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

সড়ক বিভাগের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী আদম আলী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘ব্রিজ মেরামতের কাজ ধীরে হচ্ছে এমন অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। ফাটল মেরামত অনেক আগেই শেষ হয়েছে। এখন ব্রিজটি মজবুত করার কাজ করা হচ্ছে। তবে সেখানে নতুন ব্রিজ নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই ব্রিজটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর