ঈদুল আযহার বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। ঈদকে সামনে রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জমে উঠতে শুরু করেছে কোরবানির পশুর হাট। ঈদের দিন যত এগিয়ে আসছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিভিন্ন হাটে ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়। ঈদকে সামনে রেখে জেলায় ১০১টি পশুর হাটে প্রতিদিনই বিক্রি হচ্ছে গরু, ছাগল ও মহিষ। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি এই বছর তুলনামূলকভাবে দাম কম।
এদিকে কোরবানির পশুর হাটগুলোতে যাতে কেউ হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ প্রশাসনও সার্বক্ষণিক নজরদারি করছেন। প্রতিটি হাটে রয়েছে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে তার সাথে পাল্লা দিয়ে কোরবানির গরু, ছাগল ও মহিষ কিনতে হাটগুলোতে বাড়ছে ক্রেতাদের ভিড়। পছন্দ মতো গরু-মহিষ কিনতে ক্রেতারা ঘুরছেন বিভিন্ন বাজারে। তাছাড়া ক্রেতাদের কথা বিবেচনা করে প্রতিনিয়ত হাটে বাড়ছে গরু মহিষের আমদানি।
এবার জেলায় মোট ১০১টি স্থায়ী ও অস্থায়ী হাট রয়েছে। যার মধ্যে সদর উপজেলায় ১২টি, আশুগঞ্জ উপজেলায় ৮টি, নাসিরনগর উপজেলায় ৭টি, সরাইল উপজেলায় ৬টি, নবীনগর উপজেলায় ১৩টি, আখাউড়া উপজেলায় ৫টি, কসবা উপজেলায় ১৫টি, বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ২৫টি, বিজয়নগর উপজেলায় ১০টি স্থায়ী-অস্থায়ী হাট রয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি উপজেলায় আরও কিছু হাট রয়েছে। সব মিলিয়ে জেলায় প্রায় দুই শতাধিক হাট রয়েছে। সবগুলো হাটে বিভিন্ন সময়ে চলছে বেচাকেনা।
বুধবার (৭ আগস্ট) জেলার নবীনগরের বাইশমৌজা বাজারে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটানা চলে কোরবানির পশু বেচাকেনা। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সবার উপস্থিতিও লক্ষ করা গেছে এই হাটে।
জেলার নবীনগর উপজেলার বাইশমৌজা এলাকার মো. ফালু মিয়া এই বাজার থেকে গরু কিনেছেন। তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান 'এবার বাজরে গরু মহিষের দাম অনেকটাই হাতের নাগালে। সকাল থেকেই বাজারে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বিক্রেতারাও অনেক গরু, ছাগল ও মহিষ বিক্রি করতে পেরেছেন।'
জেলার আশুগঞ্জ হাটে গরু কিনতে আসা শহিদুল মিয়া বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, 'বিভিন্ন বাজার ঘুরে ঘুরে দেখছি। গত বছরের তুলনায় দাম অনেকটাই স্থিতিশীল। এবার বাজার মধ্যবিত্তদের হাতের নাগালেই থাকবে বলে মনে হচ্ছে। তবে দিন যত যাচ্ছে ক্রেতাদের ভিড়ও বাড়ছে। শেষ পর্যন্ত দাম কেমন থাকবে তা এখনও বলা যাচ্ছে না।'
আশুগঞ্জ হাটে গরু ও মহিষ বিক্রেতা মো. আবু সাইদ মিয়া বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘নিজেরা গরু মহিষ লালন পালন করে কিছুটা লাভের আশায় বিক্রি করতে এসেছি। এখনো দাম অনেকটাই কম বলছে ক্রেতারা। দাম যদি এই অবস্থায় থাকে তাহলে অনেকটা লোকসান গুনতে হবে।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. তাপস কান্তি দত্ত বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, জেলার কোরবানির পশুর চাহিদা মেটাতে ১ লাখ ৫ হাজার ৯৬০টি পশু মজুদ রয়েছে। যার কারণে এবার জেলার কোরবানির পশুর কোন সংকটের সম্ভাবনা নেই। পাশাপাশি আমরা অসুস্থ পশু শনাক্তকরণে জেলার প্রতিটি হাটে মোবাইল মেডিক্যাল টিম রেখেছি। তারা সবসময় মাঠে সক্রিয় রয়েছে।
এদিকে, ঈদকে সামনে রেখে যাতে কোন রকম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে সেজন্য জেলা পুলিশ প্রশাসন থেকে নেয়া হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রতিটি হাটেই পুলিশের তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়াও পুলিশের মোবাইল ও পেট্রোল টিম টহলে থাকবে। যেকোন নাশকতা এড়াতে পুলিশ কাজ করছে বলে জানায় জেলা পুলিশ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, জেলার ১০১ টি পশুর হাটে পুলিশের বিশেষ টিম কাজ করছে। এছাড়াও অজ্ঞানপার্টি কিংবা জাল টাকা সনাক্ত করতে সাদা পোশাকেও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যেকোন ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে ক্রেতা বিক্রেতাদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দিতে আমরা তাদের পাশে থাকব। কারো কোন অভিযোগ থাকলে সেটি তাৎক্ষণিক দেখা হবে বলেও জানান তিনি।